দেশ প্রতিবেদক : রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্রিন সিটি আবাসন প্রকল্পের দুর্নীতির অভিযোগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের যে চার কর্মকর্তার নাম প্রকাশ করা হয়েছে তা অযৌক্তিক। অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি দিয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।
চিঠিটিতে উল্লেখ করা হয়েছে- গ্রিন সিটির আসবাবপত্র কেনার ব্যাপারে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের চার কর্মকর্তার জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে এদের দায়ী করা অযৌক্তিক। সেই সঙ্গে তা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে চিঠিতে। ভবন নির্মাণের কাজের সঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট ছিলেন না, তাদের কেন দায়ী করা হলো- চিঠিতে এটাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, পাবনার রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকার জন্য বিছানা, বালিশ ও আসবাবপত্র অস্বাভাবিক মূল্যে ক্রয় দেখানোর অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। প্রতিবেদন দুটিতে রূপপুর বালিশকাণ্ডের ঘটনায় ৩৬ কোটি ৪০ লাখ ৯ হাজার টাকার গরমিল পাওয়া গেছে বলে তদন্তের জন্য গঠিত কমিটির প্রতিবেদন গত ২৪ জুলাই প্রকাশ করা হয়। তখন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ প্রতিবেদন তুলে ধরে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শম রেজাউল করিম বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় পাওয়া গেছে ৩৪ জন কর্মকর্তা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কিছু ঠিকাদারি কাজের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। এর মধ্যে চার কর্মকর্তা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের।
এ প্রতিবেদনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের চার কর্মকর্তার নাম প্রকাশ করার পরদিন ২৫ জুলাই বিষয়টি অস্বীকার করে এর প্রতিবাদ জানিয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া হয়।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, ভবন নির্মাণে গণপূর্ত বিভাগের সঙ্গে যে চুক্তি (এমওইউ) হয়, সে অনুসারে সার্বিক কাজের দায়িত্বে ছিল ওই বিভাগই। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের এই কাজের সঙ্গে সংযুক্ত করার কথা নেই। চুক্তিতে রূপপুর প্রকল্পের পক্ষ থেকে এই কাজের তদারকি করা হবে, এটাও নেই। গণপূর্ত বিভাগ সরকারের একটি সংগঠন। এ কারণে ভবন নির্মাণের দায়িত্ব ওই বিভাগকেই দেওয়া হয়। এ কাজের জন্য টেন্ডার, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি, অডিট এমনকি অনুমোদন সবকিছুই গণপূর্ত বিভাগ করেছে। তারপরও কেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দায়ী করা হলো; যারা এতে সংশ্লিষ্ট না তাদের নাম দেওয়া হলো প্রতিবেদনে- এই বিষয়গুলো চিঠিতে জানতে চাওয়া হয়েছে এবং একইসঙ্গে এসব নাম প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে।
তবে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি বলে সূত্রগুলো জানায়।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পটি নিরাপত্তার দিক থেকে অত্যন্ত স্পর্শকাতর। এর সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টিও জড়িত। এই প্রকল্পে যারা কাজ করছেন, তারা অত্যন্ত ডেডিকেশন নিয়েই কাজ করছেন। বিশ্বের অন্য যে কোনো দেশে এ ধরনের প্রকল্প নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা আইনগতভাবে নিষিদ্ধ। কিন্তু কাজের স্বচ্ছতা নিয়ে যাতে কোনো প্রশ্ন না উঠে, সে জন্য এ ধরনের কোনো চিন্তা-ভাবনা করা হয় না।
ওই কর্মকর্তারা আরও বলেন, গ্রিন সিটির ভবন নির্মাণ রূপপুর প্রকল্পের মূল কাজ নয়। রাশিয়ার প্রযুক্তি ও তাদের এক্সপার্টদের সহযোগিতায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বিদেশি যারা এই প্রকল্পের কাজ করছেন, তাদের আবাসনের জন্য এই ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। তারা চলে যাওয়ার পর এখানে বাংলাদেশের যারা বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন, তাদের জন্য এটা ব্যবহার করা হবে। গণপূর্ত সরকারের বিভিন্ন সেকশনে এ ধরনের ভবন নির্মাণের কাজ করে থাকে। তাদের অভিজ্ঞতা আছে, এ কারণে সরকারের এই সংগঠনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তারপরও এই প্রকল্প তত্ত্বাবধানে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এমনকি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানও মাঝেমধ্যে তাদের কাজের মান ঠিক রাখা এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার তাগিদ দিয়েছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
এ বিষয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, এই প্রকল্পের কাজটি অত্যন্ত দায়িত্বশীল ও বড় একটি কাজ। এই কাজ যারা করছেন, তাদের ডেডিকেশন না থাকলে করা সম্ভব না। এই কাজের সঙ্গে যারা যুক্ত, তারা সবাই ডেডিকেটেড, সেভাবেই তারা কাজ করছেন। তাদের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই।
জুলাই ৩১, ২০১৯ at ১২:৩৩:৩৫ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/এসজে
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.