Take a fresh look at your lifestyle.

ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে দেশের বাইরে পাচার করছেন পার্থ বণিক

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

>>বাড়ি থেকে উদ্ধার ৮০ লাখ টাকা, পার্থ বণিকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু
>>হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচারের তথ্য খতিয়ে দেখছে দুদক
>>পার্থের অবৈধ সম্পদের পৃথক অনুসন্ধান শুরু
>>সোহেল রানা ও পার্থকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে

দেশ প্রতিবেদক : সিলেটের ডিআইজি (প্রিজন্স) পার্থ গোপাল বণিক ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত বিপুল পরিমাণ অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে দেশের বাইরে পাচার করছেন বলে নানা মাধ্যম থেকে তথ্য পাচ্ছে দুদক। এসব তথ্য যাছাই-বাছাই করতে পার্থকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম কারাগারের তৎকালীন জেলার সোহেল রানা ও পার্থ বণিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুখোমুখি করার কথা ভাবছে দুদক।

এর আগে পার্থ বণিকের বাসা থেকে ঘুষের ৮০ লাখ টাকা উদ্ধারের ঘটনায় করা মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে। বুধবার দুদকের সহকারী পরিচালককে এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়।

পার্থ গত ১০ বছরে কারাগার থেকে অবৈধভাবে কি পরিমাণ টাকা আয় করেছেন সে বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন তদন্ত কর্মকর্তা। এ মামলা ছাড়াও তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আলাদা একটি অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। দুদক চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ফকরুল ইসলাম ওই অনুসন্ধান চালাচ্ছেন। তবে অনুসন্ধান ফাইলটি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হতে পারে।

দুদকের পরিচালক মুহাম্মদ ইউসুফ বলেন, গ্রেফতারকৃত পার্থ বণিকের অবৈধ সম্পদের সন্ধানে কাজ চলছে। দুটি আলাদা টিম এ দায়িত্ব পালন করছে। আশা করি তদন্তে পার্থ বণিকসহ অনেক কর্মকর্তার বিপুল পরিমাণ অর্থের সন্ধান পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, আমরা চারদিক থেকে চট্টগ্রাম কারাগারের কর্মকর্তাদের দুর্নীতির তদন্ত করছি।

সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, পার্থ বণিকের বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া ৮০ লাখ টাকা ছাড়াও আরও ২০ লাখ টাকার একটি প্রাথমিক তথ্য একটি সূত্র থেকে জানা গেছে। চলতি মাসেই তার বাসায় নগদ আরও ২০ লাখ টাকা আসার কথা ছিল। সব মিলে ১ কোটি টাকা হলে তিনি হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করতেন বলেও দুদক জানতে পেরেছে।

অর্থ পাচারের সঙ্গে পার্থ বণিকের সম্পৃক্ততা বের করতে নানা কৌশলে কাজ চলছে। দুদকের মামলায়ও এ পাচারের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। ২৯ জুলাই দুদকের সহকারী পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন বাদী হয়ে করা মামলায় বলা হয়, আসামি পার্থ গোপাল বণিক সরকারি চাকরিতে কর্মরত থেকে অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করেন।

অবৈধ উপায়ে তিনি বৈধ পারিশ্রমিকের অতিরিক্ত হিসেবে ঘুষ গ্রহণ করে জ্ঞাতআয়বহির্ভূত ৮০ লাখ টাকা অর্জন করে তা পাচারের উদ্দেশ্যে তিনি নিজের বাসার কেবিনেটে লুকিয়ে রাখেন। যা দণ্ডবিধির ১৬১ (ঘুষ) ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

পার্থ বণিক দেশের বাইরের এক আত্মীয়ের কাছে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচারের পরিকল্পনা করেছিলেন বলে দুদকের কাছে তথ্য ছিল। সে উদ্দেশ্যেই এত টাকা বাসায় জমা করছিলেন তিনি। এজন্যই ব্যাংকে জমানো টাকা নেই বলে দাবি করেন তিনি। ওই কর্মকর্তা বলেন, যার বাসায় এত টাকা থাকে তিনি কিনা চড়েন বন্ধুর দেয়া গাড়িতে, থাকেন শাশুড়ির বাড়িতে। এছাড়া উত্তরায় মায়ের নামে আছে একটি ফ্ল্যাট। যার মালিকও নন তিনি। পার্থ গোপাল বণিকই এর প্রকৃত মালিক বলে মনে করছে দুদক।

পার্থ বাসায় অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া দুদক পরিচালক মুহাম্মদ ইউছুফ বলেছেন, পার্থ বণিকের ঘোষিত আয়কর ফাইলে ওই ৮০ লাখ টাকার ঘোষণা নেই। তাই আমাদের মনে হয়েছে এ টাকা অবৈধ আয় থেকে অর্জিত। আমরা মনে করি গাড়ি ও বাড়ি তার নিজেরই। তিনি অবৈধ সম্পদ বৈধ করতে তাদের নামে ক্রয় করেছেন মাত্র।

৩০ এপ্রিল থেকে চট্টগ্রাম কারাগারের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত অন্তত ৫০ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে তদন্ত করে আসছে দুদকের পরিচালক মুহাম্মদ ইউসুফের নেতৃত্বে একটি টিম। ওই টিমের সদস্যরা ২৮ জুলাই পার্থ বণিককে দুদকে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

ওই দিনই পার্থ বণিক স্বীকার করেন, তার গ্রিন রোডের বাসায় নগদ ৮০ লাখ টাকা আছে। তাকে নিয়ে দুদকের টিম বাসায় গিয়ে ওই টাকা জব্দ করে তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে পার্থ বণিক ৮০ লাখ টাকার বৈধ কোনো উৎস দেখাতে পারেননি বলে দুদক কর্মকর্তারা জানান।

যদিও তাকে আদালতে সোপর্দ করার পর জামিন চেয়ে শুনানিতে তার আইনজীবীরা বলেছেন, ওই টাকা তার শাশুড়ির। কিন্তু এত টাকা শাশুড়ির তা পার্থ বণিক দুদক কর্মকর্তাদের বলেননি। বরং তিনি নিজেই বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে ফেঁসে যান।

২৯ জুলাই চট্টগ্রামের সাবেক সিনিয়র জেল সুপার (বর্তমানে বরিশালে কর্মরত) প্রশান্ত কুমার বণিককেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক টিম। দুদকের কাছে তথ্য ছিল তিনিও মোটা অংকের ঘুষের টাকা নিজের হেফাজতে রেখেছেন।

২৮ জুলাই পার্থ বণিক গ্রেফতারের পর প্রশান্ত কুমার সতর্ক হয়ে যান। দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেছেন, তৎকালীন জেলার সোহেল রানা তাদের নাম বলে ফাঁসিয়েছেন। সোহেল রানার সঙ্গে তাদের বিরোধ থাকায় তিনি গ্রেফতারের পর ঊর্ধ্বতন কয়েক কর্মকর্তার নাম প্রকাশ করে দেন।

তবে দুদকের তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এটা অজুহাত। কারাগারের ঊর্ধ্বতন সব কর্মকর্তাকেই পর্যায়ক্রমে আইনের আওতায় আনা হবে। কারও মুখ দেখে নয়- দুর্নীতি-অনিয়ম ও অপরাধই হবে তদন্তের মুখ্য বিষয়।

জুলাই ৩১, ২০১৯ at ১৩:০৭:৩৭ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/এসজে

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.

%d bloggers like this: