Take a fresh look at your lifestyle.

জয়পুরহাটে কোরবানীর জন্য প্রস্তুত দেড় লাখ পশু

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আল মামুন, জয়পুরহাট : জয়পুরহাট জেলায় এবার কোরবানীর জন্য চাহিদা রয়েছে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার পশু। কিন্তু জেলায় এবার কোরবানী যোগ্য উৎপাদিত পশু প্রস্তুত করা হয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার যা প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় ২০ হাজার বেশী।

জেলার ৫ উপজেলার ছোট-বড় প্রায় ১২ হাজার ২শ’ ২৮ টি খামারীরা এসব কোরবানীর গরু প্রাকৃতিকভাবে পালন করেছে। এর মধ্যে তালিকা ভূক্ত খামার রয়েছে সাড়ে ৩ হাজার ।

জেলা প্রাণীসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, কোরবানী যোগ্য গরু ও মহিষ রয়েছে ৫৯ হাজার ৪শ’৩৩, ছাগল রয়েছে ৬৩ হাজার ৮শ’ ১৩, ভেড়া ১৯ হাজার ২শ’ ৫৪ এছাড়াও দুম্বা ও উট রয়েছে ৬টি।  এর মধ্যে জয়পুরহাট সদর উপজেলায় ৫৩ হাজার ৭৮, আক্কেলপুর উপজেলায় ২২ হাজার ৯শ’৩৩, পাঁচবিবি উপজেলায় ২৭ হাজার ৮শ’৮৪, কালাই উপজেলায় ৩৬ হাজার ১শ’৮২ এবং ক্ষেতলাল উপজেলায় ১৪ হাজার ২শ’ ৬৮।

পাঁচবিবির উপজেলার চানঁপাড়া গ্রামের খামারী আখতার জামান বলেন, সাধারণত গরুকে প্রাকৃতিক পন্থায় মোটা-তাজা ও সুস্থ রাখতে খড়, লালি গুড়, ভাতের মাড়, তাজা ঘাস, খৈল, গম, ছোলা, খেসারী, মাসকালাই ও মটর ডালের ভুসিসহ বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হয়। গরুর জন্য এটা সাস্থ্য ও বিজ্ঞান সম্মত।

এ নিয়মে গরু পালন করলে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবার সম্ভাবনা থাকে না। এ ধনের গরুর গোস্ত খেয়ে অসুস্থ হওয়ার ঝুকি থাকে না তাই প্রাকৃতিক ও নিরাপদ উপায়ে গরু মোটাতাজা করণ করায় এর চাহিদা বেশি এবং দামও ভাল পাওয়া যায়।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার হালট্রি গ্রামের খামারী বেলাল মোল্লা বলেন, প্রাকৃতি পদ্ধতিতে প্রায় ১০০টি গরু মোটা-তাজা করণ করেছি। কিন্তু কিছু মৌসুমী ব্যবসায়ী কৃত্রিম উপায়ে মোটা-তাজা করণ করায় আমাদেরও বদনাম হচ্ছে। আমরা এ সব গরু ছোট থেকে বড় করেছি। আগের তুলনায় গো-খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় লাভ কম হচ্ছে।

আক্কেলপুর উপজেলার কানুপুর গ্রামের খামারী উজ্জ্বল হোসেন বলেন, আগে কৃত্রিম পদ্ধতিতে কিছু অসাধু মৌসুমী ব্যবসায়ী কোরবানী ঈদের বাজার ধরার লক্ষে দুর্বল ও রোগাক্রান্ত বাছুর অল্প টাকাই কিনে সে গরুকে দ্রুত মোটা-তাজা করতে বিভিন্ন রকম ঔষধ খাওয়ান। এসব ঔষধ খাওয়ার ফলে হরমন উচ্চ মাত্রায় রাসায়নিক এবং ক্ষতিকারক হয়। গরু ব্যবসায়ীরা ভুসি ও খৈলের সাথে একধরনের পাওডার মিশিয়ে খাওয়ানোর ফলে গরুর শরীর ফুলে ফেপে মোটা করত। কিন্তু এ বছর এ মোটা-তাজা করণ এলাকাই নেই বললেই চলে। তিনি আরো বলেন প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে ২৪ টি পালন করেছি।

সদর উপজেলার হেলকুন্ডা গ্রামের মহসিন হোসেন বলেন, কোরবানির জন্য বড় সাইজের গরু ক্রয় করে কয়েক মাস ধরে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে গরু মোটা-তাজা করে ঈদে বিক্রির জন্য তৈরি করেছি, আশা করছি গরু বিক্রি করে লাভ হবে।

চিকিৎসকদের মতে, কৃত্রিম উপায়ে স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ খাওয়ানোর পর গরুর চামরার ভেতরে বাড়তি পানির স্তর জমে গরুকে বেশি মোটাতাজা ও সবল দেখায়। এতে কমে যায় গরুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। স্টেরয়েড মিশ্রিত গরুর গোস্ত মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর। এটি এমন পদার্থ যা মাত্রাতিরিক্ত তাপেও ধ্বংশ হয় না।

বিগত দিনে খামারী এ পদ্ধতিতে গরু চাষ করে বাজারে বিক্রি করতে না পেরে লোকসান হয়েছে। ফলে এ বছর জয়পুরহাটের পাঁচবিবি, কালাই, আক্কেলপুর ও ক্ষেতলাল সহ বিভিন্ন এলাকায় খামারী ও চাষীরা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করণ করেছেন বলে জানান।

জয়পুরহাটের আ লিক প্রাণী রোগ অনুসন্ধান কেন্দ্রের ইউএলও ডা.রোস্তম আলী বলেন, মানুষ এখন অনেক সচেতন হয়েছে তাই কৃত্রিম উপায়ে গরু পালন করে লাভবান হতে পারেনা। এই গরু বাজারে আসলে সহজেই চিনতে পারে।এরপর ও যদি কেউ বাজারে এরকম গরু বিক্রির জন্য আনে তাহলে আমাদের ভেটেরিনারী মেডিক্যাল টিম বাজার থেকে ফেরত পাঠাবে।

জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মাহফুজুর রহমান বলেন, প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজাকরণ গরুর গোস্ত খেলে অসুস্থ হওয়ার ঝুকি থাকে না। গরুকেও স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ গরুর জন্য ক্ষতিকর এবং গরুর গোস্ত বিষাক্ত হয়ে পরে, ফলে এ গোস্ত ফরমালিনের মত মানুষকে ধীরে ধীরে নিন্তেজ করে ফেলে।

এতে মানুষের লিভার, কিডনি, হৃদযন্ত্র, পুরুষত্ব-মাতৃত্বহীনতা সহ বিভিন্ন অঙ্গে মারাত্বক ঝুকি রয়েছে। এসব ঝুকি থেকে রক্ষার জন্য জেলা প্রাণীসম্পদ বিভাগ শুধু কোরবানীর মৌসুমে নয় প্রায় দুই বছর পূর্ব থেকে নিরাপদ মাংস ও নিরাপদ ডিম, দুধ উৎপাদনের লক্ষে খামারী ও সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূলক সভা সেমিনার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়।

এর সুফল হিসেবে এবার জেলায় নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত মোট ছোট-বড় প্রায় ১২ হাজার ২শ’ ২৮ টি খামারীরা প্রাকৃতি ও নিরাপদ পদ্ধিতে গরু পালন করেছে। খামারীরা কোন রকম রাসায়নিক প্রক্রিয়া ছাড়াই প্রাকৃতিক উপায়ে জেলা প্রাণীসম্পদ অফিস প্রযোজনীয় পরামর্শ ও চিকিৎসা নিয়ে পশু প্রতি-পালন করছে। খামারীরা প্রাকৃতিক ভেজাল মুক্ত পশু পালন করায় তাদের দাম ও ভাল প্ওয়ার আশা করছে।

তিনি আরো বলেন, জেলার হাট-বাজার গুলোতে এবার ৯টি ভেটেরিনারী মেডিক্যাল টিম পশুর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে প্রস্তুত থাকবে।

আগস্ট ৩, ২০১৯ at ১২:৪২:৫৪ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/এসজে

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.

%d bloggers like this: