Take a fresh look at your lifestyle.

টোটকা চিকিৎসায় ডেঙ্গু প্রতিরোধের হুজুগ, নেই কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

মশা নিয়ন্ত্রণ কিংবা ডেঙ্গু প্রতিরোধে যখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নাকানি-চুবানি অবস্থা, তখন জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে টোটকা চিকিৎসার কয়েকটি পদ্ধতি। ইউটিউব ও ফেসবুকে এ সংক্রান্ত বিভিন্ন ভিডিও এবং লেখা ভাইরালও হচ্ছে দেদার। তাতে বলা হচ্ছে- পেঁপে পাতার রস, নিম পাতা, তুলসী পাতা, হারপিক, ব্লিচিং পাউডার, নারকেল তেল দিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণ কিংবা ডেঙ্গু রোগ থেকে বাঁচা যায়। যদিও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, এসব তথ্য বা টোটকার বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই। আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে এসব টোটকা প্রয়োগ করা হলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই এ সময় জ্বরে আক্রান্ত হলে নিজে থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

এ মুহূর্তে দেশজুড়ে আলোচিত টোটকাগুলো হচ্ছে- ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্লাটিলেট কমে গেলে তা বাড়াতে সাহায্য করে পেঁপে পাতার রস, ফলে আক্রান্তের ঝঁকি কমে যায়। নিম পাতাতে বিদ্যমান অ্যালকালাইড হলো মশার যম, তাই এই পাতা এবং এর তেল মশার আক্রমণ থেকে মানুষকে সুরক্ষা দিতে পারে। তুলসী গাছ হচ্ছে মশা তাড়ানো গাছ, ডেঙ্গু প্রতিরোধে বেশি করে এই গাছ লাগান। কমোডে বা বেসিনে হারপিক ও ব্লিচিং পাউডার ঢেলে এডিস মশা মারা সম্ভব। তা ছাড়া নারিকেল তেল মশা তাড়ায় এবং তেল গায়ে মাখলে মশার কামড় থেকে বাঁচা সম্ভব।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) অধ্যক্ষ ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের দেশে ‘ফুঁ’ দিয়ে কিংবা তাবিজ দিয়েও সব রোগ সারানো যায়। আমাদের কাছে এ বিষয়ে অনেকে জানতে চান। কিন্তু এসব উপাদানকে কার্যকর বলার আগে আমাদের দেখতে হবে এগুলোর বৈজ্ঞনিক কোনো ভিত্তি আছে কিনা। আয়ুর্বেদিক, ইউনানি কিংবা অ্যালোপ্যাথিতেও প্রাকৃতিক কিছু উপাদান ব্যবহৃত হয়। কিন্তু তাই বলে নিম পাতা, তুলসী পাতা, পেঁপে পাতার রস, নারকেল, হারপিক কিংবা ব্লিচিং পাউডার দিয়ে মশা নিধন কিংবা ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্ভব- এমন কোনো স্টাডি আমরা এখনো পর্যন্ত পাইনি। সুতরাং এসব উপাদান কার্যকর তা বলা সম্ভব নয়।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, প্রকৃতিতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা দিয়ে রোগবালাই থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। নিম পাতায় অনেক সময় পোকামাকড় দূর হয়। তাতে ডেঙ্গু প্রতিরোধ বা মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। নারকেল তেল বা অন্য তেল শরীরে মাখলে শরীর পিচ্ছিল হবে। তখন মশা বসতে বা হুল ফোটাতে হয়তো সমস্যা হতে পারে। তবে এসব কোনো সমাধান নয়।

এসব টোকটা চিকিৎসাকে ‘রাবিশ’ বলে আখ্যা দেন প্রিভেনটিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. এম এইচ চৌধুরী লেনিন। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে এসবের কোনো সম্পর্ক নেই। এসব কথা অজ্ঞানতা প্রসূত ছাড়া আর কিছুই নয়। আমাদের দেশের মানুষদের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, সবাই নিজেকে প্রতিটি বিষয়ে অভিজ্ঞ মনে করেন। যা আমাদের জন্য বড়ই দুঃখের। হারপিক যারা বানায় তারাও কিন্তু এই কথা স্বীকার করছে না যে, হারপিক দিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। হারপিক টয়লেট ক্লিনার। এটা মশা মারার জন্য নয়। বরং হারপিক ও ব্লিচিং পাউডার রাসায়নিক এবং বিষাক্ত পদার্থ, যা পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকর। এসবের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এগুলো কোনোভাবেই করা যাবে না।

প্লাটিলেট প্রসঙ্গে এক অনুষ্ঠানে প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, প্লাটিলেট ৪/৫ দিনে কমে। ২-৩ দিন পর এমনিই বাড়া শুরু করে দেয়। এটা প্রাকৃতিকভাবেই। এখানে পেঁপে পাতার রসের কোনো ভূমিকা নেই।

পেঁপে-নিম-তুলসী পাতা বিষয়ক প্রচারণাকে গুজব বলে আখ্যা দেন শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মো. আব্দুল লতিফ। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, যারা এসব কথা বলছে এবং ছড়াচ্ছে তাদের মাঠে নামিয়ে দেয়া উচিত। তারা প্রমাণ করুক, তারা যা বলছে তা সত্যি। যারা এসব বলছে তারা কি এসব টোটকা তাদের আত্মীয় বা নিকট কারোর ওপর প্রয়োগ করেছে? ডেঙ্গু নিয়ে এখন দেশে যে পরিস্থিতি তাতে এসব অবৈজ্ঞানিক ও বিভ্রান্তিমূলক কথা না বলে সমন্বিতভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা প্রয়োজন। এসব বিষয়ে কান দেয়া মোটেও উচিত না।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.

%d bloggers like this: