জীবননগর উপজেলার মিনাজপুর মাঠপাড়ায় ভূমিহীন এক শারীরিক প্রতিবন্দ্বীর দীর্ঘদিনের দখলে থাকা খাস জমি দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে একটি প্রভাবশালী মহল। বিরোধপূর্ণ ওই খাসজমিতে ইতিমধ্যেই প্রভাবশালী চক্রের এক সদস্য পাকা ইমারত গড়ে তুলেছেন। এদিকে শারীরিক প্রতিবন্দ্বী ভূমিহীনের খাসজমি হঠাৎ দখল করে সেখানে পাকা স্থাপনা গড়ে তোলার ঘটনায় গ্রামের অধিকাংশ মানুষ প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠেছেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট দু’টি পক্ষের মধ্যে রক্তকক্ষয়ী সংঘর্ষেরও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সরজমিনে এলাকাবাসী সুত্র জানান, জীবননগর উপজেলার বাঁকা ইউনিয়নের মিনাজপুর বেড়েমাঠপাড়া গ্রামের মৃত কোবাদ আলী মাতবরের ভূমিহীন কামাল হোসেন (৫৫) দীর্ঘদিন ধরে রাস্তার পার্শ্বে থাকা খাস জমিতে বসতি স্থাপন করে সেখানে গত ৩০-৪০ বছর ধরে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করে আসছেন। এ অবস্থায় ভূমিহীন কামাল হোসেন গত কয়েক বছর আগে শারীরিক ভাবে প্রতিবন্দ্বী হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে তার স্ত্রী সংসার চালাতে বেকায়দায় পড়ে যান। শেষ পর্যন্ত কোন উপায় না পেয়ে কাজের তাগিদে কুষ্টিয়া খাজানগরে চলে যান। আর এই সুযোগে একই গ্রামের প্রভাবশালী মেছের আলীর ছেলে লিয়াকত আলী (৪৮) অতিসম্প্রতি প্রতিবন্দ্বী কামালের দখলকৃত খাসজমি বেদখল করে সেখানে পাকা ইমারত গড়ে তোলেন। ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় তোড়পাড় শুরু হয়ে যায়। ভূমিহীনের খাসজমি উদ্ধার করতে গ্রামের অধিকাংশ মানুষ প্রতিবাদ মুখর হয়ে ওঠে।
ভুমিহীন ও শারীরিক প্রতিবন্দ্বী কামালের স্ত্রী লালজান বানু দেশ দর্পণকে বলেন, আমাদের কোন জমি জায়গা না থাকার কারণে রাস্তার পার্শ্বে থাকা খাসজমিতে বসতি গড়ে তুলে প্রায় ৩০-৪০ বছর ধরে বসবাস করে আসছিলাম। হঠাৎ করেই আমার স্বামী শারীরিক ভাবে প্রতিবন্দ্বী হয়ে পড়ে। ফলে আমি সংসার চালাতে হিমশিম খাওয়ার কারণে বাধ্য হয়েই চাতালে কাজ করার জন্য স্বামীকে নিয়ে কুষ্টিয়া খাজানগরে চলে যাই। এই ফাঁকে আমাদের গ্রামের প্রভাবশালী ঘরের সন্তান লিয়াকত আলী তার ভাই শওকত আলী ও আক্কাস আলী আমাদের দখলে থাকা খাস জমি বেদখল করে সেখানে পাকা ইমারত তুলতে শুরু করেন। আমরা ঘটনা শুনে বাড়ীতে এসে তাদেরকে বাঁধা দিই। লিয়াকতরা প্রায় ৫০-৬০ বিঘা জমির মালিক। তাদের বাড়ীও আমাদের পাড়ায় নয়,অথচ তারা রাতারাতি আমাদের দখলীয় জমিতে পাকা ঘর করছেন!
অভিযুক্ত লিয়াকত আলী খাসজমিতে পাকা ইমারাত তৈরীর কথা স্বীকার করে বলেন,আমার মামা কাশেম আলী ওই খাসজমিতে বসবাস করতেন। এখন আমাদের জমিতে বসবাস করছেন,তাই আমি মামার খাসজমিতে দোকান ঘর করেছি। পুলিশ গিয়ে ঘর তুলতে নিষেধ করেছেন। আমি আপাতত: কাজ বন্ধ রেখেছি। আমরা কোন ঝামেলায় জড়াতে চাই না।
বাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের সংশি¬ষ্ট ওয়ার্ড মেম্বার মহিদুল ইসলাম বলেন,আমার জানামতে কামাল একজন অতিদরিদ্র এবং ভ’মিহীন। সম্প্রতি সে শারীরিক ভাবে প্রতিবন্দ্বী হয়ে মৃত্যু পথযাত্রী। কামাল দীর্ঘদিন ধরে খাসজমিতে ঘর বাড়ী করে বসবাস করে আসছেন। লিয়াকত আলী একজন জমিদার ফ্যামিলির ছেলে। লিয়াকত আমাকে বলেছেন যে,সে খাস জমিতে একটি পাকা দোকান ঘর তুলেছেন। তবে খাসজমিটিতে তার মামা কাশেম বসবাস করতো সেই হিসাবে সে দখল করে পাকা দোকান ঘরে করেছে বলে স্বীকার করেন। জমি দখল করে সেখানে পাকা স্থাপনা তৈরীকে কেন্দ্র করে গ্রামে দু’টি পক্ষ তৈরী হয়েছে।
জীবননগর থানার সাব-ইন্সপেক্টর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমি আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সেখানে সোমবার সকালে গিয়েছিলাম এবং ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয়পক্ষকে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বিরোধপূর্ণ জমিতে ঘর নির্মাণ করতে নিষেধ করি। আমার প্রাথমিক তদন্তে কামাল ভ’মিহীন এবং শারীরিক প্রতিবন্দ্বী প্রতীয়মান হয়েছে। এলাকাবাসী জানায় বিরোধপূর্ণ জমিতে যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছেন। কিন্তু হঠাৎ করেই প্রভাবশালী লিয়াকত সেখানে দোকান ঘর করতে পাকা ইমারাত তৈরী করেছেন।
এ ব্যাপারে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঘটনার ব্যাপারে উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনেছি। আমি জমি মাপজোঁকের ভুমি অফিসের সার্ভেয়ারকে দায়িত্ব দিয়েছি। সার্ভেয়ারের প্রতিবেদন পাওয়ার পর সৃষ্ট বিরোধ নিস্পত্তির উদ্যোগ নেয়া হবে।
আগস্ট ৭, ২০১৯ at ১১:৩৮:০৩ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/তআ
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.