Take a fresh look at your lifestyle.

কোরবানির ঈদ

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

ইসলামী বর্ষ পজ্ঞীর ১২ তম মাস জিলহজ মাস। এই মাসটি মুসলিমদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। কেননা এই মাসে মুসলিমরা হজ্জ পালন করে থাকেন আর জিলহজ মাসের ৭ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত হজ্ব পালনের নির্ধারিত সময়। জ্বিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখ থেকে ঈদুল আজহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করার পর থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত মুসলমানদের কোরবানির সময় ধার্য্য করে দেওয়া হয়েছে এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বাৎসরিক ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা বা কোরবাণীর ঈদ বলে পালন করা হচ্ছে। 
ইসলামে মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় দু’টো ধর্মীয় উৎসবের দ্বিতীয় উৎসব হলো কোরবানির ঈদ । এই উৎসবকে ঈদুজ্জোহাও বলা হয়। ঈদুল আযহা মূলত আরবী বাক্যাংশ। এর অর্থ হলো ‘ত্যাগের উৎসব’। এই উৎসবের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হল ত্যাগ করা। এ দিনটিতে মুসলমানেরা ফযরের নামাযের পর ঈদগাহে গিয়ে দুই রাক্বাত ঈদুল আযহা’র নামাজ আদায় করে এবং যার যার আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী উট,ছাগল, ভেড়া ও গরু আল্লাহর নামে কোরবানি করে থাকেন।
ইসলামের বিভিন্ন বর্ণনা অনুযায়ী, মহান আল্লাহ তা’আলা হযরত ইব্রাহিম (আঃ)কে স্বপ্নযোগে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বস্তুটি কুরবানি করার নির্দেশ দেন। আল্লাহ তাআলা ইব্রাহিম আঃ কে স্বপ্নে দেখিয়ে দেন এবং বলে দেন যে“তুমি তোমার প্রিয় বস্তু আল্লাহর নামে কোরবানি কর”। ইব্রাহীম আঃ স্বপ্নে আল্লাহর আদেশ পেয়ে ১০টি উট প্রথমে কোরবানি করেন কিন্তু মহান আল্লাহ তায়ালা পুনরায় একই স্বপ্ন দেখান তখন ইব্রাহীম আঃ আবারও ১০০টি উট কোরবানি করেন। এরপরেও ইব্রাহিম আঃ একই স্বপ্ন দেখেন আর তখনই ইব্রাহিম আঃ ভাবনায় পরে যান চিন্তা করতে করতে একসময় তিনি বুঝতে পারেন যে তার প্রিয় বস্তু কি? যে জিনিস ইব্রাহিম আঃ কাছে সবচাইতে প্রিয়?অবশেষে তিনি বুঝতে পারেন যে তার একমাত্র আদরের পুত্র সন্তান ইসমাইল আঃ হলেন সবচাইতে প্রিয়।প্রিয় পুত্র ইসমাইল(আ.) ছাড়া আর কোনো কিছু তার কাছে নেই। 
ইব্রাহিম আঃ তখন কোনো কিছু না ভেবে পুত্র ইসমাইল আঃ কে কোরবানি দেওয়ার উদ্দেশ্যে আরাফাত ময়দানে ঘুরতে যাবেন বলে নিয়ে গিয়েছিলেন। যখন ইব্রাহীম (আঃ) আরাফাত পর্বতের উপর গিয়ে পৌছান তখনই তাঁর পুত্রকে স্বপ্নের কথা বলেন যে আল্লাহ তাআলা তাকে হুকুম করেছেন তার প্রিয় বস্তুকে কোরবানি দিতে।পুত্র ইসমাইল আঃ তার বাবার কথা শুনে খুবই খুশি হলেন এবং পিতাকে হুকুম করলেন আল্লাহকে সন্তুষ্টি করতে তাড়াতাড়ি তাকে কোরবানি দিতে এবং তার পিতাকে বললেন তাহলে আর দেরি করছেন কেনো পিতাজি নিশ্চয় আপনি মহান আল্লাহর হুকুম পালন করবেন ইহাতে আমি অনেক আনন্দিত হবো যে মহান আল্লাহ তাআলা আমাকে কোরবানির জন্য পছন্দ করেছেন।তবে পিতাজি আমি আপনার আদরের সন্তান হয়তোবা আমার গলায় ছুরি চালাতে গিয়ে আপনার হাত কাপতে পারে তাই আপনি আপনার দুচোখ বেঁধে নিন আর আমার দুহাত শক্ত করে বেঁধে দিন যাতে করে আপনার কোনো রকমের সমস্যা না হয় আমার গলায় ছুরি চালাতে।এই কথা শুনে ইব্রাহিম আঃ তার পুত্র ইসমাইল আঃ কে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করলেন এবং ইসমাইল আঃ এর গলদেশে ছুরি চালালেন যখনই ছুরি চালানো শেষ হলো এবং ইব্রাহিম আঃ তার চোখের কাপর সরিয়ে নিলেন তখনই তিনি বিস্মিত হয়ে দেখেন যে তাঁর পুত্র ইসমাইল আঃ এর পরিবর্তে একটি প্রাণী কোরবানি হয়েছে আর তাঁর পুত্র ইসমাইল আঃ এর কোন ক্ষতি হয়নি বরং তার পুত্র তার পাশেই দাড়িয়ে আছে। এর পর থেকেই এই ঘটনাকে স্মরণ করে সারা বিশ্বের মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য প্রতি বছর জিলহজ মাসে এই দিবসটি অর্থাৎ ঈদ উল আযহা অথবা কোরবানির ঈদ নামে উদযাপন করে আসছেন।
 
◆কোরবানির দেওয়ার নিয়মাবলী :-
 
ইসলাম মতে ঈদুল আযহার দিনে যার যাকাত দেয়ার সামর্থ্য আছে অর্থাৎ যার কাছে ঈদের দিন প্রত্যূষে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য বা সমপরিমাণ সম্পদ (যেমন জমানো টাকাা) আছে তাঁর ওপর ঈদুল আযহা উপলক্ষে পশু কুরবানি করা ওয়াজীব। ঈদুল আযহার দিন থেকে শুরু করে পরবর্তী দুইদিন পশু কুরবানির জন্য নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে। মুসাফির বা ভ্রমণকারির ওপর কুরবানি করা ওয়াজিব নয়। ঈদুল আযহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ শেষে কুরবানী দিতে বলা হয়েছে। ঈদুল আযহার নামাজের আগে কুরবানি করা সঠিক নয়।
 
বাংলাদেশের মুসলিমরা সাধারণত গরু বা খাসী কুরবানি দিয়ে থাকেন। এক ব্যক্তি একটি গরু, মহিষ বা খাসি কুরবানি করতে পারেন। তবে গরু বা মহিষ এর ক্ষেত্রে সর্বোচচ্চ ৭ ভাগে কুরবানি করা যায় অর্থাৎ ২, ৩, ৫ বা ৭ ব্যক্তি একটি গরু কুরবানিতে শরিক হতে পারেন। কুরবানির খাসীর বয়স কমপক্ষে ১ বছর হতে হবে। গরু ও মহিষের বয়স কমপক্ষে ২ বছর হতে হবে। নিজ হাতে কুরবানি করা ভাল। কুরবানি প্রাণির দক্ষিণ দিকে রেখে কিবলামুখী করে,ধারালো অস্ত্র দিয়ে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে জবাই করতে হয়।
 
◆কোরবানির মাংস বন্টনের নিয়মাবলী:-
সাধারণত আমাদের দেশে কুরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করে ১ ভাগ গরিব-দুঃস্থদের মধ্যে ১ ভাগ আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে এবং ১ ভাগ নিজেদের খাওয়ার জন্য রাখা হয়। তবে মাংস বিতরণের কোন সুস্পষ্ট হুকুম নেই কারন কুরবানির হুকুম পশু জবেহ্‌ হওয়ার দ্বারা পালন হয়ে যায়। কুরবানির পশুর চামড়া বিক্রির অর্থ দান করে দেয়ার নির্দেশ রয়েছে। 

মহান আল্লাহ তাআলা সকল মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে যেনো এই কোরবানি দেওয়ার তৌফিক দান করেন এবং সঠিকভাবে যেনো ইসলামের নিয়মাবলী মেনে নিয়ে এই ঈদুল আজহার ঈদ অথবা কোরবানির ঈদ উৎযাপন করতে পারেন।

আগস্ট ১১, ২০১৯ at ১১:৫২:২৯ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/ফিখা/তআ

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.

%d bloggers like this: