আজ পবিত্র ঈদুল আযহা বা কুরবানির ঈদ। ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর এই ঈদ। সত্য ও সুন্দরের জন্য ত্যাগ স্বীকারের এক প্রতীকী রূপ ঈদুল আযহা। সারা বিশ্বের মুসলমানরা সব ভেদাভেদ ভুলে এই উৎসবে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হন। ত্যাগের এই উৎসবে মানুষ নিজের ভেতরের আত্মম্ভরিতা ও স্বার্থপরতাকে কুরবানি দিয়ে প্রীতি ও ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হন।
আজ থেকে প্রায় ৪ হাজার বছর আগেকার কথা। হজরত ইব্রাহিম (আ.) ইসলাম ধর্মের একজন গুরুত্বপূর্ণ নবী, যিনি ছিলেন আল্লাহর একজন প্রিয় নবীও- স্বপ্নাদিষ্ট হন প্রিয়তম বস্তু কুরবানি করার জন্য। সেই অনুযায়ী তিনি পরম করুণাময় আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আ.) কে কুরবানি দিতে সিদ্ধান্ত নেন।
কিন্তু মহান সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় তাঁকে আর শেষ পর্যন্ত পুত্রকে কুরবানি দিতে হয়নি। ইসমাইল (আ.) এর পরিবর্তে কুরবানি হয় একটি পশু। খোদাভক্তি, আনুগত্য ও ত্যাগের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন হজরত ইব্রাহিম (আ.)। এই সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমাকে তুলে ধরাই ঈদুল আযহার পশু কুরবানির প্রধান মর্মবস্তু। এর সুমহান তাৎপর্যকে যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে পারলে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, কুরবানিকে কেন্দ্র করে পার্থিব ধন-দৌলত জাহির করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু বাস্তবে আমরা এর উল্টো চিত্রই দেখতে পাই। কে কত বেশি দামের বা কত বেশিসংখ্যক পশু কুরবানি দিচ্ছেন, সেটাই অনেকের কাছে মুখ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। অথচ কুরবানির আসল তাৎপর্য বাহ্যিক আড়ম্বর প্রদর্শনীতে নয় বরং আত্মত্যাগের সাধনায়। তাই শান-শওকাত, বিত্তবৈভবের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ প্রদর্শনী কুরবানির ঈদের চেতনার সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। ঈদুল আযহা বা কুরবানির পালনের তার প্রকৃত চেতনা ও মর্মবাণীর প্রতিফলন ঘটুক- এটাই প্রত্যাশিত। ঈদ মানেই আনন্দ। ঈদের জামাতে ধনী-নির্ধন নির্বিশেষে সব মুসলমান এক কাতারে সমবেত হন।
এতে সাম্য ও ভ্রাতৃত্ববোধের চমৎকার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। তবে সমাজের সর্বস্তরে এই সাম্য প্রতিষ্ঠা এখনো হয়নি। ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান বিশ্বের নানা স্থানের মতো বাংলাদেশেও ব্যাপক। সুতরাং কাক্সিক্ষত বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে আমাদের ত্যাগ, সহমর্মিতা, ভালোবাসার আদর্শে অনুপ্রাণিত হতে হবে। বিত্তহীনদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে বিত্তবানদের। ঈদুল আজহা মানুষকে সেই মহৎ আদর্শের দিকেই আহ্বান করে। আজকের এ দিনে আমরা সৌদি আরবে অবস্থানরত সব হজব্রত পালনকারীর নিরাপত্তা ও সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।
প্রত্যাশা করছি, হজব্রত পালনকারী সবাই নিরাপদে স্ব-স্ব দেশে ফিরে আসুন। আমাদের ঐকান্তিক প্রত্যাশা, ঈদুল আয্হার মহান ত্যাগের মহিমায় দেশ ও বিশ্বের সব মানুষ উজ্জীবিত হয়ে উঠবেন।
ঈদুল আয্হা বয়ে আনুক অপার আনন্দ, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে বার্তা। ঈদের আনন্দকে উপলক্ষ করে কণ্টকমুক্ত হোক আমাদের সবার আগামী দিনের পথ চলা।
সবাইকে ঈদ মোবারক।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.