সম্মানিত শিক্ষক মহোদয় ফেসবুকে তার গভীর কষ্টের কথা তুলে ধরেছেন! স্ত্রীর সম্মান বাঁচাতে গিয়ে তিনি লাঞ্চিত হয়েছেন। হাটে মাঠে ঘাটে বাজারে বিভিন্ন ধরনের লোকজন থাকে। কেউই শৃঙ্খলায় থাকে না। এটি শুধু দুঃখের না অনুতাপের বিষয় বটে!
সেটার ভুক্তভোগী আবার দেশের সমাজের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের একজন শিক্ষক। তিনি পরিচয় দিয়ে বারবার সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন করেও কাউকে তার পক্ষে পাননি।
দুর্ভাগ্য! দুর্ভাগ্য কাটাতে আমাদেরকে আবার ফিরে যেতে হবে বিদ্যাপীঠে। এমন অবস্থা করতে হবে এজন্য আমরা জনসাধারণের মধ্যে খুঁজলে সহজেই পাই একজন শিক্ষক, একজন ছাত্র, একজন পুলিশ, একজন ব্যবসায়ী, একজন ভালো পথচারী।
তার ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখে মনে হয়েছে ওই জনতার মধ্যে অসচেতন লোকজন ছিল। সমাজের শ্রেষ্ঠতা , ভদ্রতা, নম্রতা পরোপকারী এগিয়ে আসা ছাত্রের সৃষ্টি করতে হবে।
এমন একটা সিচুয়েশনে আমিও পড়েছিলাম। আমার গাড়িতে একটি মোটরসাইকেলে তিনজন হেলমেট ছাড়া জিগজাগ করে চালানো অবস্থায় এসে লাগিয়ে দিল। ক্ষতিটা আমারই হলো। সঙ্গে তাদের বহরের তিনটি মোটরসাইকেলে প্রায় নয় দশ জন ছিল। মোটরসাইকেল ঠেকায় ছয় জন রেমবো স্টাইলে এসে বলল গাড়ি থেকে নাম।
নামার পরে আমি তাদেরকে সালাম দিলাম। রাস্তা ছেড়ে পাশে এসে কথা বলার জন্য আমন্ত্রণ করলাম। ধর ধর মার মার কাটকাট শব্দ থেকে তারা কি বুঝে চুপ হয়ে গেল।
পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলার সময় তাদেরকে কথা বলতে ভয় পেলাম। সাত থেকে নয় জন এটি চুলের কাটিং অন্যরকম। অর্থাৎ চারপাশে কোন চুল নেই মাথার উপরের চুল। আমি জীবনেও দেখিনি। পুলিশে মিশন করার সুবাদে প্রায় তেতত্রিশটি দেশের পুলিশের সঙ্গে মিশেছি। অপরাধ ও শৃঙ্খলা নিয়ে কথা বলেছি। কোথাও খুঁজে পায়নি এরকম চুলের কাটিং।
পরনে প্যান্ট গুলো ছিল জিন্সের। কারো পায়ের নিকট ছেড়া আরে হাটুর নিচে ছেড়া কারো পিছনে ছেড়া। প্যান্ট গুলো খসে পড়ে যাচ্ছে নিচের দিকে।
এক হাত দিয়ে প্যান্ট টেনে তুলছে আর এক হাত দিয়ে আমাকে মারার মন করছে।
পায়ে ছেলের জুতা এমন জুতা কোথাও দেখিনি। অর্ধেক পা বাইরে অর্ধেক পা ভিতরে। এমনভাবে হাঁটছে রাস্তায় ঘষা লেগে রাস্তা ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে।
সে কাপড় ছিল ছোট ছোট। মনে হল কোন বিদেশীদের ফেলে দেওয়া গেঞ্জি কুড়িয়ে পেয়ে পড়েছে। সে গেঞ্জি সামনে ছেঁড়া পিছনে ছেঁড়া।
সবাই পুরুষ মানুষ ছিল। বয়স সতের থেকে একুশের মধ্যে। হাতে কারো সুতা বান্দা ছিল কারোর আবার চুড়ি পরা ছিল। চুড়িকে যে বেসলেট মনে করে পড়ছে সেটা তারা না বুঝেই পড়ছো হয়তো।
যাই হোক তাদের কে পরিচয় দিতে অনুরোধ করলাম। তারা পরিচয় দিবে না, না দেই পারেতে আমাকে মারে। সঙ্গে আমার দুই সন্তান এবং স্ত্রী ও ছিল। ছোট ছোট বাচ্চা দুটি তো কান্নাকাটির অবস্থা।
হাউ মাউ করে বলছে আব্বুকে মেরো না। আমার স্ত্রী প্রতিবাদ করতে গেলে অশালীন কথাবার্তা। তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলার প্রস্তাব দেওয়াতে তাদের মধ্যে থেকেই দুইজন ভদ্রলোক রাজি হয়ে গেলেন।
সে দুজনের চেহারার বেশভূষা পোশাক-পরিচ্ছদ একেবারে সুন্দর ছিল। আমার চেয়েও সুন্দর। কথাবার্তার ইস্টাইল ভদ্র। মনে হচ্ছিল যে আমি তো পুলিশে চাকরি করি সুযোগ আর সাধ্য থাকলে তাদের দুজনকেই আমার চেয়ে উচ্চপদে পুলিশে চাকরি দিয়ে দেই।
তো যাই হোক তাদের প্রস্তাব দিলাম কথা বলার জন্য। তারা রাজি হলো কি বিষয়ে কথা বলবেন।
বললাম ফিজিক্যাল ফিটনেস এবং মেন্টাল ফিটনেস। আমার বা আপনাদের মধ্যে জারি দরকার তাকে ফিজিক্যালি অথবা মেন্টালি ফিট করা হবে।
ততক্ষণে দুই ভদ্রলোক পরিচয় দিলেও তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। হঠাৎ করে এদের মধ্যে বেড়াতে এসে স্থানীয় বন্ধুবান্ধব দিন পাল্টায় পড়ে মোটরসাইকেলে ঘুরতে বের হয়েছে।
তারা দুজন বলল, আগে যদি জানতাম এই ভাবে মটর সাইকেল চালাবে রাস্তায় যাকে তাকে থ্রেট করবে তাহলে বের হতাম না।
আমি জিজ্ঞেস করলাম কাকে কাকে থ্রেট করেছে।
উনারা দুইজন বললেন একজন ট্রাফিক পুলিশ একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটম্যান দুইজন রিক্সা ওয়ালা একজন ট্রাক ডাইভার কে। কারণ তারা রাস্তায় জিগজাগ মোটর সাইকেল চালাবে সে রকম ফাঁকা করে দেয়নি বলে।
বাকিদের পরিচয় জানতে চাইলে ভদ্র দুজন ছাত্র পরিচয় দিতে পারবেন না বলে সরি প্রকাশ করেছেন। গ্রহণ করে বললাম এখন তাহলে কোনটি আমাদের দরকার। ফিজিক্যাল ফিটনেস না মেন্টাল ফিটনেস।
ফিজিক্যালি ফিট করার মধ্য দিয়েই মেন্টালি ফিট করার একটি উপায় আছে। সেটের চার্জিং খোলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দেখে আমরা আমাদের সমস্যা গুলো বলি।
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ে দুজন ছাত্র বলল, ওদের চক্ষু লজ্জায় কিছু বলতে পারছিনা। ওদের বাবা মা জানলে ওদেরকে চরম বকা দেবে এবং শারীরিক ও মানসিক ভাবে ফিট করে দিবে।
আমি তাদেরকে প্রস্তাব দিলাম অতদূর যাওয়ার দরকার কি? বাড়ি যেতে হবে সবার বাবা মা কে জানাতে হবে বলতে হবে সময় লাগবে পাশেই থানা আছে চলেন সবাই চলে যাই। সেখানে শৃঙ্খলার ফিটনেস দেওয়া হয়। আমার আপনার জারি দরকার আমরা একটু ফিট হয়ে আসি।
এতক্ষণ এর কথাবার্তা বকাটে কয়েকজন হা করে শুনতে ছিল। বেখেয়াল এর মধ্যে যে তাদের মুখের মধ্যে মশা যাচ্ছে আর আসছে বুঝতে পারেনি। আমি বলে দিলাম যে মুখের মধ্যে ডেঙ্গু মশা যেতে পারে। তখন তারা বলল থাকে সরিয়ে দাঁড়ায়ই।
ডেঙ্গু মুসা মুখে গেলে ডেঙ্গু জ্বর হবে এবং বললাম ডেঙ্গু খেয়ে ফেললে কিছু হবে না ডেঙ্গু মশা যদি আপনাকে দংশন করে তাহলে জ্বর হবে।
বুঝলাম তারা এটাও জানে না।
কথা বলতে বলতেই পিছন থেকে দুজন দায়িত্বরত পুলিশ অফিসার চলে আসলেন। তারা জিজ্ঞেস করতেই বকাটে কয়েকজন বলল না না স্যার কিছু হয়নি, কিছু হয়নি।
ভদ্র দুজন ছাত্র সরি বলে সবাই মোটরসাইকেলের চলে গেল। উল্লেখ্য মোটরসাইকেলে যাওয়ার সময় দু’জন করে উঠে চলে গেল। বাকি কয়েকজন হাটতে হাটতে দুরে চলে গেল।
তো মান্যবর শিক্ষকের স্ট্যাটাসটি পড়ে মনে হল। যদি আমার মতো অবস্থান সৃষ্টি হতো। না তিনি এরকম একটা পরিবেশ পেতেন। তাহলে তার অপমানের দুঃখটা একটু হলেও কম তো।
তার হতাশাজনক অপমানজনক ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখে মনে হল সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি আমার ঘটনাটি তুলে ধরি।
আসানসোল পেছনের দিকে না যেয়ে, সামনের দিকে যাত্রার জন্য মানুষ সৃষ্টি করি। হয় না হয় না হবেনা হবেনা করে একদিন সৃষ্টি হয়ে যাবে।
সেদিন শুধু শিক্ষক না, শুধু পুলিশ না, শুধু রিক্সাওয়ালা না, শুধু সাংবাদিক না, সর্বস্তরের মানুষ রাস্তাঘাটে সম্মান পাব এবং দিব।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.