কেমিক্যাল শেডের অগ্নিকান্ডে তদন্ত কমিটি গঠন
যশোরের বেনাপোল বন্দরে একটি কেমিক্যাল শেডে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে কোটি টাকার আমদানি পণ্য পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বলে ধারণা করছেন ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবার সকালে বন্দরের ৩৫ নম্বর কেমিক্যাল শেডে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে।
এ নিয়ে গত দুই দশকে দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দরের পণ্য গুদামে বড় ধরনের নয়টি অগ্নিকান্ডে ব্যবসায়ীরা প্রায় ১৭শ’ কোটি টাকার লোকসানের শিকার হয়েছেন। এসব ঘটনায় বার বার বন্দর থেকে পণ্য চুরি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ এলেও বন্দর কর্তৃপক্ষের তেমন কোনও সচেতনতামূলক পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। এ পর্যন্ত একজন আমদানিকারকও তার পুড়ে যাওয়া মালামালের ক্ষতিপূরণ পায়নি। অগ্নিকান্ডের ঘটনা নিয়ে আলোচনায় এমন অভিযোগ তোলেন আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত বন্দরের বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা। তাদের ভাষ্য, অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলেই তদন্ত কমিটি হয়। তবে, তদন্ত আলোর মুখ দেখে না।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে কেমিক্যালের বিক্রিয়ায় বন্দরের ৩৫ নম্বর শেডে হঠাৎ করে আগুন ধরে যায়। পরে বন্দর কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে বেনাপোল ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ব্যাপারে বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দরের উপ-পরিচালক আবদুল জলিলের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গোডাউন ইনচার্জ মনির হোসেন জানান, সকালে গোডাউন খুলেই ভিতরে আগুন দেখতে পেয়ে বন্দর পরিচালক ও ফায়ার সার্ভিসকে জানানো হয়। আনসার সদস্যরা পাশ্বের গোডাউন থেকে আগুন নিভানো গ্যাস এনে আগুনে নিক্ষেপ করলে আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। পরে ফায়ার সার্ভিসের ১টি ইউনিট এক ঘণ্টা চেষ্টা করে আগুন পরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন।
তবে তিনি জানান, বন্দরের নিজস্ব ফায়ার ইউনিটের লোকবল কম থাকায় আগুন তাৎক্ষণিক নেভানো সম্ভব হয়নি। ফায়ার ইউনিটের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য তিনি বলেন।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক প্রদোষ কান্তি দাস জানান, সকালে কেমিক্যালের ৩৫ নাম্বার শেডে হঠাৎ করে আগুন লেগে বেশকিছু মালামাল পুড়ে গেছে। কেন কীভাবে আগুন লেগেছে তা তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর জানা যাবে।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে বন্দরের ১০ নম্বরসহ ১০টি পণ্যগারে অগ্নিকান্ডে ক্ষতি হয় প্রায় ৩০০ কোটি টাকার পণ্য। ২০০১ সালে ২৬ নম্বর পণ্যগারে আগুনে ক্ষতি হয় ৩০ কোটি। ২০০৫ সালে ১০ ও ৩৫ নম্বর পণ্যগারে আগুনে ক্ষতি হয় ৭০ কোটি। ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি ৩৫ নম্বর পণ্যগারে আগুনে ক্ষতি হয় প্রায় ৫০০ কোটি। একই বছরের ২২ জুন ২৭ নম্বর পণ্যগারে আগুনে ক্ষতি হয় ১৫০ কোটি। ২০১৬ সালে ২ অক্টোবর ২৩ নম্বর পণ্যগারে আগুনে পুড়ে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় আনুমানিক ৫শ’ কোটি টাকা। ২০১৮ বছরের ৩ জুন বন্দরের ভারতীয় ট্রাক টার্মিনালে আগুনে পুড়ে ক্ষতি হয় প্রায় ৫০ কোটি টাকার আমদানি পণ্য। আর সর্বশেষ, মঙ্গলবারের অগ্নিকান্ডে ধারণা করা হচ্ছে কোটি টাকার মালামাল পুড়ে ছাই হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় এ পথে ব্যবসায়ীদের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। কিন্তু শুরু থেকেই বন্দর কর্তৃপক্ষের অর্থ বাণিজ্যে নানা অব্যবস্থাপনায় ঝুঁকির মধ্যে চলে আসছে বন্দরের কার্যক্রম। বারবার অগ্নিকান্ড ও নাশকতামূলক কর্মকান্ড ঘটলেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ। ফলে ক্ষতির শিকার হয়ে পথে বসছেন ব্যবসায়ীরা।
আগস্ট ২৭, ২০১৯ at ২০:২৩:০৬(GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/কআ/তআ
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.