দুই বন্ধুকে সাথে নিয়ে স্ত্রী তমাই স্বামী এলজিইডি‘র ঝিনাইদহ অফিসের ড্রাইভার এটিএম হাসানুজ্জামান @ জগলুকে হত্যা করে বলে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) যশোরের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) যশোরের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আসামী তাহমিনা পারভীন তমা (৩৭), স্বামী-মৃত এটিএম হাসানুজ্জামান @ জগলু, সাং-জুগিয়া, স্কুলপাড়া, থানা-কুষ্টিয়া সদর, জেলা-কুষ্টিয়া। ইং ১৯৯৯ সালে নিহত এটিএম হাসানুজ্জামান @ জগলুর সাথে আসামী তাহমিনা পারভীনের বিয়ে হয়। জগলুর সাথে সংসার জীবনে তার ০১ ছেলে ও ০১ মেয়ে আছে। তার স্বামী বর্তমানে এলজিইডি অফিস, ঝিনাইদহে ড্রাইভার হিসেবে কর্মরত ছিল। আসামী তাহমিনা পারভীন তমা ০২ সন্তান নিয়ে কুষ্টিয়া শহরে থাকত। তার স্বামী ২০০৮ সালে সাসপেন্ড হওয়ার পর সংসারে আর্থিক সংকট দেখা দেয়। এর জের ধরে তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহের সৃষ্টি হয়। তখন থেকে তাদের দাম্পত্য জীবনে বিপর্যয় ঘটে। আসামী তাহমিনা পারভীন ছেলেকে ঢাকায় পড়ানোর জন্য মিরপুর-১৩ নং ০১ রুমের মেস ভাড়া করে রাখে ও আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে ভর্তি করে। মেয়ে কুষ্টিয়া বাসায় থাকে। ঢাকায় আসামী তাহমিনা পারভীনের সাথে আলামিন ও মুরসালিন নামে ০২ যুবকের বন্ধুত্ব হয়। তার স্বামী বিষয়টি জানতে পারে। তখন থেকে তাকে ভিকটিম হাসানুজ্জামান @ জগলু আরো সন্দেহ এবং নানা ধরেণের গালিগালাজ করতে থাকে। আসামী তাহমিনা পারভীনের স্বামীর সাথে দুরত্ব সৃষ্টি হয়। গত কুরবানী ঈদের আগের দিন আসামী তাহমিনা পারভীন কুষ্টিয়া বাসায় আসে কিন্তু তার স্বামীর সাথে দেখা হয় না, ফোনে গালিগালাজ হয়। আসামী তাহমিনা পারভীন মুরসালিনের বৌ সেজে এবং আলামিন তার দেবর হিসেবে কেরানীগঞ্জে একটি বাসা ভাড়া করে থাকতো। নিহত হাসানুজ্জামানের অনেক টাকা পয়সা আসামী তাহমিনা পারভীন তার বন্ধুদের পিছনে খরচ করে ফেলে। আসামীর কাছে তার স্বামী হাসানুজ্জামান @ জগলু প্রায়ই টাকা চাইতো কিন্তু আসামী তাহমিনা পারভীন টাকা পাবো কোথায় বললে তার স্বামী তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতো। গত ইং ২৬-০৮-২০১৯ তারিখ মিরপুর-১৩ নম্বরে আসামী তাহমিনা পারভীন তার ছেলের বাসায় এসেছিল। ঐ দিন আসামী তাহমিনার সাথে তার স্বামীর মোবাইল ফোনে ঝগড়া হয় এবং ভিকটিম হাসানুজ্জামান তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। আসামী তাহমিনা পারভীন সন্ধ্যার পর ছেলের বাসার সামনে রাস্তায় নেমে এসে আলামিন ও মুরসালিনকে মোবাইল ফোন করে আসতে বলে। তারা দু’জন আসামীর কাছে আসলে তাদেরকে বলে, ‘‘জগলু আমার জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে, আমার জন্য কিছু একটা করো।’’ তখন আসামী তাহমিনা পারভীন ও তার বন্ধুরা মিলে ভিকটিম হাসানুজ্জামানকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। কাজটা কিভাবে করা হবে আসামী তাহমিনা পারভীন, আলামিন ও মুরসালিন তার ছেলোর বাসার সামনেই রাস্তার উপর বসে পরিকল্পনা করে। আলামিন ও মুরসালিন আসামীকে বলে যে, সে জগলুকে ডাকলে আসবে কি না ? আসামী তাহমিনা পারভীন তাদেরকে বলে যে, জগলু তার কাছে টাকা চেয়েছিল, টাকা নেওয়ার জন্য বললে আসবে। তখন আসামী তাহমিনা পারভীনের বন্ধুরা বলে গাড়ি নিয়ে গাড়িতে কাজটা সারতে হবে। এজন্য অচেতন করতে হবে তা নাহলে গাড়ির মধ্যে ধস্তা-ধস্তি হবে। চেতনানাশক দিয়ে অচেতন করে নিয়ে গলায় রশ্মি দিয়ে ফাঁস লাগায়ে মারতে হবে। এরপর আলামিন ও মুরসালিন মিরপুর কোন একটা ঔষধের দোকান থেকে পাতলা কাঁচের বোতলে চেতনানাশক ঔষধ নিয়ে আসে এবং ফাঁস দেওয়ার জন্য দড়িও সংগ্রহ করে। এরপর একটা উবারের গাড়ি ডাকে। কিছুক্ষণ পর গাড়ি আসে। গাড়ি চালকের বাড়ি খুলনা ডুমুরিয়া এলাকায়। সে আসামী তাহমিনা পারভীন ও তার বন্ধুদের পূর্ব পরিচিত। বিভিন্ন সময় তাদের প্রয়োজনে তাকেই ডেকে নেয়। এরপর আসামী তাহমিনা পারভীন মুরসালিনের মটর সাইকেলে ও আলামিন উবারের গাড়িতে কেরানীগঞ্জের বাসায় চলে যায়। সেখানে রান্না করে খাওয়া দাওয়া করে। এরপর পরিকল্পনা মোতাবেক ইং ২৭-০৮-২০১৯ তারিখ ভোর অনুমান ০৫.০০ টার দিকে পাটুরিয়া ঘাট পার হয়ে ঝিনাইদহ হয়ে যশোরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে।
সকাল অনুমান ১১.৩০ মিনিটের দিকে আসামী তাহমিনাসহ তার বন্ধুরা যশোরে পৌছায়। অনুমান ১২.০০ দিকে গাড়ি নিয়ে যশোর ‘জাবির ইন্টারন্যাশনাল’ হোটেলে যায়। আসামী তাহমিনা পারভীন আলামিন ও মুরসালিনের পরিচিত যশোরের একজনকেও হোটেলে দেখতে পায়। তারা সকলে লিফ্ট দিয়ে দো’তলায় রেস্টুরেন্টে যায়। সেখানে আসামী তাহমিনা পারভীন ওয়াশরুমে ফ্রেশ হয়। রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়া শেষে স্থানীয় ব্যক্তির বাসায় গিয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করে তারা গাড়ি নিয়ে মনিরামপুর-কেশবপুর হয়ে উবারের গাড়ির ড্রাইভারের বাড়িতে যায়। ড্রাইভারের বাড়িতে যাওয়াকালীন সময়ে ভিকটিম হাসানুজ্জামান @ জগলু আসামী তাহমিনা পারভীনকে ফোন দিলে সে তাকে বলে থ্রী-পিচ ও কসমেটিকস মালামাল কেনার জন্য সে যশোরে এসেছে। তখন ভিকটিম হাসানুজ্জামান তার কাছে ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকা চাইলে, আসামী তাহমিনা বলে ২০,০০০/- (বিশ হাজার) টাকা দেয়া যাবে। কোথা থেকে টাকা নিবা ? তখন ভিকটিম হাসানুজ্জামান ঝিনাইদহ শামীমা ক্লিনিকের সামনে টাকা নেয়ার কথা জানায়। আসামী তাহমিনা ও তার বন্ধুরা যশোরে ঘুরাফেরা করে সময় কাটাই। সন্ধ্যার পরে ঝিনাইদহের উদ্দেশ্যে গাড়ি নিয়ে রওনা করে। রাত অনুমান ১০.০০ টার দিকে ঝিনাইদহ শামীমা ক্লিনিকের সামনে পৌছায়ে আসামী তাহমিনা তার স্বামীকে গাড়িতে উঠায়ে নেয়। ভিকটিম হাসানুজ্জামান পিছনের ছিটের মাঝখানে, আসামী তাহমিনা ভিকটিমের বামে এবং আলামিন ডানে বসে। মুরসালিন গাড়ির সামনের ছিটে বসে। ঝিনাইদহ শহর পার হয়ে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আসামী তাহমিনা পারভীন ও আলামিন দুইদিক থেকে ভিকটিমের দুই হাত ধরে। আলামিন চেতনানাশক ঔষধ তুলা ভিজিয়ে ভিকটিম হাসানুজ্জামানের নাকে চেপে ধরলে সে অচেতন হয়ে যায়। তখন আলামিন, মুরসালিন ও আসামী তাহমিনা পারভীন রশ্মি দিয়ে ভিকটিম হাসানুজ্জামানের গলা পেচিয়ে শ^াসরোধ করে হত্যা করে। ড্রাইভার গাড়ি যশোরে দিকে চালাতে থাকে। প্রায় ৪০ মিনিট পথ যাওয়ার পর একটা ফাঁকা জায়গায় রাস্তার ডানদিকে গাড়ি থামায়ে আলামিন ও মুরসালিন ভিকটিম হাসানুজ্জামানের মৃতদেহ গাড়ি থেকে টেনে নামিয়ে রাস্তার ডান পাশের্^র ঢালে ফেলে দেয় এবং মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য আলামিন ও মুরসালিন ভিকটিমের গলায় ছুরি দিয়ে জবাই করে। আসামী তাহমিন পারভীন গাড়িতে বসে ছিল। এরপর আলামিন ও মুরসালিন তাড়াহুড়া করে গাড়িতে উঠে এবং ঢাকার দিকে রওনা দেয়। ঢাকা যাওয়ার পথে মুন্সিগঞ্জে মুরসালিনের খালার বাসায় উঠে। সেখানে ড্রাইভার, আলামিন ও মুরসালিন গাড়ি ধুয়ে ফেলে এবং আসামী তাহমিনা পারভীনের পরনে থাকা পোশাক ঐ বাসায় খুলে অন্য কাপড় পরে সকলে ঢাকা চলে যায়। এই সংক্রান্তে ভিকটিমের বড়ভাই এটিএম হাকিমুজ্জামান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে অফিসার ইনচার্জ, কোতয়ালী থানা বরাবরে অভিযোগ করলে কোতয়ালী থানার মামলা নং-৮২, তাং-২৮/০৮/২০১৯ খ্রিঃ, ধারা-৩০২/৩৪ দঃ বিঃ রুজু হয়। মামলার তদন্তকারী অফিসার লাশের সুরতহাল ও পোষ্ট মোর্টেম এর ব্যবস্থা গ্রহন করেন। উক্ত মামলার তদন্তভার গ্রহন করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) গাজী মাহবুবুর রহমান, (মোবাঃ ০১৭১৬৮৮৬৫২৬), পিবিআই, যশোর সঙ্গীয় ফোর্সসহ ইং ৩১/০৮/২০১৯ তারিখ বেলা অনুমান ১৪.৩৫ ঘটিকার সময় যশোর পিবিআই অফিস থেকে আসামী তাহমিনা পারভীন @ তমাকে গ্রেফতার করেন। ইং ০১-০৯-২০১৯ তারিখ উক্ত গ্রেফতারকৃত আসামীকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.