বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন আটকাতে রাষ্ট্রপক্ষের আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবীমহলসহ মানবাধিকার কর্মীরা।
তাদের অভিযোগ, স্থানীয় রাজনীতির চাপে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন মিন্নিকে আসামি সাব্যস্থ করে অপকর্মের হোতাদের আড়াল করতে চাইছে। স্থানীয় সাংসদপুত্র এবং তার সঙ্গীদের বাঁচাতেই রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা মিন্নির জামিন আটকাতে মরিয়া। এ খবর প্রকাশ করেছে দৈনিক ভোরের কাগজ ।
মূলত, রিফাত হত্যাকাণ্ডের পর ১৬ জুলাই মিন্নিকে বরগুনার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদের পর রাতে এ মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। গত ২৮ আগস্ট শর্তসাপেক্ষে জামিন পান আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। মিন্নিকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন আটকাতে গত রবিবার আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
এ আবেদনে ‘এডভোকেট অন রেকর্ড’ হিসেবে সুফিয়া খাতুনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ওই রায়ের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারোয়ার হোসেন বাপ্পি বলেছিলেন, এ রায়ে আমরা মর্মাহত।
রাষ্ট্রপক্ষ এ রায়ের বিরুদ্ধে নিয়মিত লিভ টু আপিল করবে। সোমবার আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত ‘নো অর্ডার’ দিলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জাহিদ সারোয়ার কাজল জানান, আজ মঙ্গলবার রায়ের কপি পাওয়া গেলে এই লিভ টু আপিল আবেদন দাখিল করা হবে।
ইতোমধ্যেই আপিল করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে যদি মিন্নি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে যায় তবে সেক্ষেত্রে তাকে গ্রেপ্তার বা আত্মসমর্পণের নির্দেশনা চাওয়া হবে।
মিন্নির জামিন আটকাতে রাষ্ট্রপক্ষের আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন তুলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিনউদ্দিন এ প্রতিবেদককে বলেন, বিষয়টি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক। স্থানীয় সাংসদের ছেলে এবং তার সঙ্গীদের রক্ষার জন্যই রাষ্ট্রপক্ষ মিন্নির জামিন আটকাতে চাচ্ছে।
তারা সরকারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, চেম্বার জজ আদালতের আদেশের পর মিন্নির কারামুক্তিতে বাধা নেই। তবে মামলায় মিন্নিকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করায় জামিনে থেকেই তাকে মামলা আইনগতভাবে মোকাবেলা করতে হবে। আমরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাবো।
এদিকে, মিন্নিকে রিমান্ডের নেয়ার তিনদিন পর পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, মিন্নি হত্যাকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা এবং হত্যা পরিকল্পনাকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে হত্যা পরিকল্পনার সঙ্গে মিন্নির যুক্ত থাকার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ।
প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশ সুপারের এমন সংবাদ সম্মেলন নিয়ে। আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীদের অভিযোগ, মূল হোতাদের বিচারব্যবস্থার বাইরে রাখার জন্যই এসব করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী সালমা আলী বলেন, এই মামলায় প্রথম থেকেই স্থানীয় এমপিপুত্রের নাম জড়িয়ে থাকার কথা আসছে। আমরা একটা বিষয় প্রায়ই দেখি, জনপ্রতিনিধিসহ লোকাল রাজনৈতিক দল এবং তার সঙ্গীরা যে পক্ষে থাকেন, স্থানীয় পুলিশ, প্রশাসন সেই পক্ষেই থাকেন। তখন অন্যপক্ষ বেশ চাপের মুখে থাকে। একজন আইনজীবী হিসেবে, মানবাধিকার কর্মী হিসেবে আমার অভিজ্ঞতা, কেসের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এমন বিষয়ও কোর্টে আলোচনায় আসে যা সঠিক তদন্তে বিঘ্ন ঘটায়। তিনি বলেন, প্রমাণিত না হলে কাউকে আসামি বলা যাবে না। তার ছবি প্রকাশও মানবাধিকারের পর্যায়ে পড়ে না। দুর্ভাগ্য, আমাদের আইনে এটি স্পষ্ট নয়। পুলিশের প্রেস কনফারেন্স বিষয়ে সালমা আলী বলেন, পুলিশের কাজ তদন্ত করা। সংবাদ সম্মেলন নয়। তদন্তের সময় টাইম টু টাইম কথা বলার সুযোগ নেই। কিন্তু আগ বাড়িয়ে পুলিশ কেন প্রেস কনফারেন্স করবেন? এর খোঁজ নেয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন আটকাতে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে গিয়েও সাড়া পায়নি রাষ্ট্রপক্ষ। মিন্নির জামিন স্থগিতের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ যে আবেদন করেছিল, তা শুনে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর চেম্বার আদালত গতকাল সোমবার ‘নো অর্ডার’ দিয়েছেন। তবে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার অনুমতি চেয়ে লিভ টু আপিল আবেদন দাখিল করবে রাষ্ট্রপক্ষ। হাইকোর্টের রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পরই এ আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ সারোয়ার কাজল।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.