মদ্যপ স্বামী শফিকুল ইসলাম জ্যোতির বেপোরোয়া গাড়ি চালানোই বিবাহোত্তর সংবর্ধনা আগেই লাশ হলো কনে তনিমা ইয়াসমিন পিয়াসাসহ একই পরিবারের তিন নারী। তারা বিবাহোত্তর সংবর্ধনার আলোকসজ্জা দেখতে বের হয়েছিল।
এ ঘটনায় আলোক ঝলকানির পরিবর্তে পরিবারের মাঝে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। পুলিশ ঘটনার পরপরই গাড়ির চালক নিহত কনে তনিমা ইয়াসমিন পিয়াসার স্বামী শফিকুল ইসলাম জ্যোতিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জ্যোতি মদ্যপ অবস্থায় বেপরোয়া গাড়ি চানানোর কারণেই মূলত দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে।
যশোর কোতোয়ালি থানার ইন্সপেক্টর শেখ তাসমীম আলম বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘শুক্রবার রাত ১টার দিকে পুলিশ কন্ট্রোল রুম ও জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বর থেকে আমরা জানতে পারি, শহরের শহীদ মসিয়ূর রহমান সড়কে একটি প্রাইভেটকার দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। তথ্য পেয়েই পুলিশের রাত্রিকালীন দুটি টহল টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এরপর সেখানে আমিও যাই। ওই প্রাইভেটকারে তিনজন পুরুষ, তিনজন নারী ও একটি শিশু ছিল। ঘটনাস্থল শহীদ মসিয়ূর রহমান সড়কের সাবেক কাস্টমস কমিশনার জিএম কামালের বাড়ির প্রাচীর ও বিদ্যুতের খুঁটিতে সজোরে আঘাত করে প্রাইভেটকারটি। বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারণেই এই দুর্ঘটনাটি ঘটে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন শফিকুল ইসলাম জ্যোতি। তিনি পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন বিষয়টি। রাতেই তাকে আটক করা হয়। কাজেই আমরা ধারণা করছি, মদ্যপান করে বেপরোয়া গাড়ি চালানোয় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। জ্যোতি সুস্থ আছেন এবং গাড়িটি পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে ঢাকা থেকে নিজস্ব প্রাইভেটকার চালিয়ে যশোরে আসেন জ্যোতি। আবার রাতে গাড়ি চালানোয় ক্লান্তির কারণে এমন দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার দিনগত রাত সাড়ে ১২টা থেকে ১টার মধ্যে শহরের শহীদ মসিয়ূর রহমান সড়কের পাশে (আকিজ গলি) একটি প্রাচীর ও বিদ্যুতের খাম্বার সঙ্গে প্রাইভেটকারটি ধাক্কা লেগে তিন নারী মারা যান। আহত হন চার জন।
নিহতরা হলেন যশোর শহরের ঢাকা রোড বিসিএমসি কলেজ এলাকার ইয়াসিন আলীর মেয়ে তানজিলা ইয়াসমিন (২৮), তনিমা ইয়াসমিন পিয়াসা (২৫) ও পিয়াসার খালাত ভাই আরএন রোড এলাকার মঞ্জুর হোসেনের স্ত্রী আফরোজা তাবাসসুম তিথী (২৬)। আহত হয়েছেন পিয়াসার স্বামী শফিকুল ইসলাম জ্যোতি (২৮), আফরোজা তাবাসসুম তিথীর মেয়ে মানিজুর (৩), শাহিন হোসেন (২৩) ও হৃদয় (২৮)।
ইয়াসিন আলীর ভাই, নিহত দুইবোনের চাচা আব্দুল কাদের জানিয়েছেন, শফিকুল ইসলাম জ্যোতির সাথে আগামী ২৩ জানুয়ারি তার ভাতিজি পিয়াসার বিবাহোত্তর সংবর্ধনার কথা ছিল।
পিয়াসার মামা শাহিনুর রহমান ঠান্ডু সাংবাদিকদের জানান, শহরের লোন অফিসপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম জ্যোতির সঙ্গে আদ্-দ্বীন সখিনা মেডিক্যালের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী তনিমা ইয়াসমিন পিয়াসার দেড় বছর আগে বিয়ে হয়। আগামী ২৩ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে পিয়াসাকে তাদের তুলে নেওয়ার কথা। সে জন্য জ্যোতির বাড়িতে আলোকসজ্জা করা হয়। পিয়াসা রাতে ফোন করে জ্যোতিকে জানান, তারা আলোকসজ্জা দেখবেন এবং শহর ঘুরবেন। এ কারণে শুক্রবার রাত ১০টার দিকে জ্যোতি তার নিজস্ব প্রাইভেটকারটি নিয়ে বের হন। গাড়িতে পিয়াসার বোন তানজিলা, খালাত ভাইয়ের স্ত্রী আফরোজা তাবাসসুম তিথী, তার মেয়ে মানিজুর এবং জ্যোতির দুই বন্ধু হৃদয় ও শাহিন ছিলেন।
তারা রাতে আলোকসজ্জা দেখে শহরে তাদের স্বজনদের দাওয়াত দিয়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে শহরের পালবাড়ি এলাকা থেকে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। ফেরার পথে রাত সাড়ে ১২টা থেকে ১টার মধ্যে যশোর শহরের পুরাতন কসবা শহীদ মসিয়ূর রহমান সড়কের (আকিজের গলি) পাশে থাকা একটি বিল্ডিংয়ের প্রাচীর ও বিদ্যুতের খুঁটিতে সজোরে আঘাত করে গাড়িটি। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন মারা যান। গাড়িতে থাকা অন্যরা কমবেশি আহত হন।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.