চীনে নতুন নিউমোনিয়া সদৃশ রহস্যময় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা অন্তত ৫০০ জন ছাড়িয়ে গেছে। আক্রান্ত হয়ে দেশটির উহান শহরে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে বিশ্বজুড়ে ভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া নিয়ে চরম উদ্বেগ ও শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
চীনজুড়ে ছড়িয়ে পড়া রহস্যময় এই ভাইরাসের কারণে এবার উহান শহরের সব গণপরিবহন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় শহরের বাসিন্দাদেরও শহর ত্যাগে নিষেধ করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, বুধবার পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ছিল ৯ জন এবং ৪৪০ জন আক্রান্ত বলে জানা যায়। একদিনেই সরকারি হিসাবে আরও ৮ জনের মৃত্যু ও ১০০ জন এতে আক্রান্ত হলেন। চীনের এই ভাইরাস নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত এই ভাইরাসটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে সংস্থাটি।
নেতৃস্থানীয় বিজ্ঞানীরা বলছেন, উহানের এই ভাইরাসে অনুমানের তুলনায় দ্বিগুণ আক্রান্ত হয়েছেন। বুধবার চীন জানায়, পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে ৪৮৩ জন ভাইরাসটিতে আক্রান্ত বলে নিশ্চিত হন তারা। তবে চীন এও জানিয়েছে, আরও ২ হাজার ১৯৭ রোগী আছেন যারা আক্রান্ত কিনা তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
গত বছরের শেষদিকে হুবেই প্রদেশের রাজধানী শহর উহানে প্রথম এই ফ্লু টাইপের এই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে। পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকায় চীন কর্তৃপক্ষ, বুধবার উহান থেকে চলাচলকারী সকল যানবহন বন্ধ ঘোষণা করেছে। হুবেই প্রদেশ ও তার রাজধানী উহান ভ্রমণে কড়া সতর্কতা জারি করেছে দেশটির সরকার।
উহান শহরে প্রায় ৮৯ লাখ মানুষের বাস। মূলত ওই শহর থেকে উৎপত্তির পর ভাইরাসটি রাজধানী বেইজিংসহ অন্যান্য প্রদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া প্রতিবেশী জাপান, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, ম্যাকাও এবং যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াতেও এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভারপ্রাপ্ত প্রধান ভ্যান কেরখোভে জানিয়েছে, চীন থেকে নতুন যে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে তার সংক্রমণ, প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে বিশ্বের সমস্ত হাসপাতালকে নির্দেশনা দিয়েছে তারা। এছাড়া ভাইরাসটির সংক্রমণ এড়াতে বিশ্বের অনেক দেশ বিমানবন্দরে চীনা নাগরিকদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।
চীনের অন্তত ১৫ জন মেডিকেল কর্মীও এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলো হলো জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট। সেভার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স) ঘরানার এই ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়, যা থেকে নিউমোনিয়াও হতে পারে।
২০০২-০৩ সালে চীনে এক সার্স ভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে। তখন ওই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শত শত মানুষের মৃত্যু হয়। এবারের ভাইরাসটি মহামারি আকার ধারণ করবে কিনা তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে প্রতিদিন যে হারে এ রোগে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন এবং যেভাবে এর বিস্তার ঘটছে তাতে মৃতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.