ভাঙন বিধ্বস্ত মেঘনার পাড়। তাই নদীপাড় পাথর দিয়ে বাঁধানো হয়। উত্তাঞ্চলের বন্যার পানি মেঘনা ধরে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়ছে। তাই বন্যার পানি যতই কমছে, নদ-নদীতে ভাঙন ততই তীব্র হচ্ছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে টানা বর্ষণ। বর্যার ভরা মেঘনা পাথর মোড়ানো তীরও গিলে ফেলছে বার বার। তাই মানচিত্র থেকে ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে দ্বীপ জেলা ভোলা সঙ্গে মেঘনা তীরের হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা। শেষ পর্যন্ত মুসকিল আসান করেছে সামান্য ঘাসই। ভাঙনরোধে ঘাসের সঙ্গে বাঁধের ওপরে থাকা গাছ জোট বেধে কাজ করছে। এই ঘাস-গাছ মিলেই মেঘনার ভাঙন রুখে দিচ্ছে।পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক। আম্ফানের পর গিয়েছিলেন সাতক্ষীরাতে। আম্ফানের যেখাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সেখানকার অধিকাংশ বাঁধ নদীতে বিলীন হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, আম্ফানের পর আমরা সাতক্ষীরাতে দেখেছি যেখানে নদীর তীরে গাছ ছিল সেসব স্থানে ভাঙন দেখা দেয়নি, আর যেসব জায়গাতে ছিল না সেখানে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাই নদীর তীরের গাছগুলো মেহেরবানি করে কাটবেন না। যে যার বাড়ির সামনে ফাঁকা জায়গাতে গাছ লাগান, এটি উপকারে আসবে। সেই গাছ ঝড়ো হাওয়া রুখে দিবে। আপনার ঘরকে রাখবে দুর্যোগ থেকে মুক্ত।
ভাঙনকবলিত মেহেন্দিগঞ্জ এলাকার বাসিন্দারা ঝড় রুখতেই বাঁধের ওপর গাছ লাগাচ্ছেন। কিন্তু গাছ আর ঘাস মিলে বাঁধ যে টেকসই হবে, তা বুঝতে পেরেছেন এই গেল বন্যায়। তারা বলছেন, বাঁধের তীরের বাসিন্দারা যে যার মতো করে গাছ লাগাচ্ছেন। তাতে করে মেঘনার ঝড়ো হাওয়া গাছের সঙ্গে এসে আটকে যাচ্ছে। ফলে বাঁধের ওপরে থাকা ঘরগুলো ঝরো হাওয়া থেকে রক্ষা পাচ্ছে। গেল আম্ফানে তারা লক্ষ করেছেন, যে বাঁধের ওপর গাছ ছিল, সেই বাঁধগুলো থেকে মাটি ক্ষয়ে যায়নি। তাই বাঁধের ভাঙন ধরেনি। এ ক্ষেত্রে বাঁধের ঢালে থাকা ঘাস, মাটি আটকে রেখেছে।
ভোলা শহরের পাশ দিয়ে মেঘনা নদী বয়ে গেছে। সম্প্রতি ভোলা শহরের শাহাবাজপুর মেঘনা পর্যটন কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, মেঘনার পাড় পাথর দিয়ে বাঁধানো হয়েছে। কিন্তু, তার পরেও রোখা যায়নি ভাঙন। তার পরেই নদীপাড়ের মাটির ক্ষয় রুখতে গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। তারই অংশ হিসেবে বাঁধের ওপর ঝাউবন তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া বাঁধের দুই পাশে বিভিন্ন গাছ লাগানো হয়েছে। যাতে করে পাথর সড়ে গেলেও গাছ মাটি আকড়ে রাখতে পারে। আর এভাবেই গাছ মেঘনার ভাঙন থেকে ভোলাকে রক্ষা করছে। যদিও গাছের পাশাপাশি বাঁধের ঢালে থাকা ঘাসও ভাঙনরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পর থেকে ভোলায় বিপৎসীমার ওপর দিয়ে জোয়ার বইছিল। তখন জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাসের আঘাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ৩২০ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। অনেক স্থানে জোয়ারের পানি বাঁধ উপচে বাড়ি-ঘরে ঢুকছিল। এমন কি ভোলার ইলিশায় বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হবার ঘটনাও ঘটেছিল।স্থানীয়রা বলছেন, ভোলার চারদিকে যে বেড়িবাঁধ রয়েছে, তার উচ্চতা জোয়ারের উচ্চতার চেয়ে কম। তাই ভোলাবাসী দীর্ঘদিন ধরে পুরো বাঁধের সংস্কারের দাবি করে আসছে।
জানা গেছে, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভোলার চারদিকে জোয়ার-জলোচ্ছ্বাস নিয়ন্ত্রণে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেন। এর দৈর্ঘ্য বর্তমানে প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার। এত দিনে সে বাঁধের অনেকাংশ ভাঙনে বিলীন হয়েছে। যেটুকু আছে, সিডর আর আইলার প্রভাবে দুর্বল রয়েছে। সেটুকুও সংস্কারের অভাবে আরো দুর্বল হয়ে পড়েছে। চলতি বছর ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে সাড়ে ছয় কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তা সংস্কার না করতেই আগস্টের উচ্চ জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাসে প্রায় সাড়ে ৩২০ কিলোমিটার বাঁধ কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
পাউবো-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান বলেন, উচ্চ জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে জরুরি সংস্কার কাজ চলছে। পাউবো চেষ্টা করছিল, বাঁধ ভেঙে যেন পানি লোকালয়ে প্রবেশ না করে। কিন্তু বাঁধ নিচু হওয়ায় তা উপচে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছিল।
পাউবো-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ বলেন, বর্ষা মৌসুমে উত্তরের বন্যার পানি নামতে না নামতেই জোয়ার উঠছে। সঙ্গে আছে লঘুচাপ। এ কারণে জোয়ারের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণে ভোলার সবটুকু বাঁধের উচ্চতা আট মিটার করা উচিত। পাশাপাশি বাঁধের ওপর বৃক্ষরোপণ করলে বাঁধ অনেকটা টেকসই হবে।
আগস্ট ৩০, ২০২০ at ১৭:৩৫:২৩ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/বাআ/এনআফটি
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.