সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা ঝড় তুলে এবারো ভোটের মাঠে সাধারণ ভোটারদের মাঝে সাড়া ফেলেছিলেন সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ও সমালোচিত ব্যক্তিত্ব আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম।
ভোটগ্রহণের শুরু থেকে গণনা পর্যন্ত আলোচনায় ছিলেন তিনি। ফলাফল ঘোষণার পূবেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নির্বাচনী এলাকায় হিরো আলম জিতবে বলে হৈচৈ শুরু হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হতে পারেননি।
বগুড়া-৪ (নন্দীগ্রাম ও কাহালু) সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে জাসদের একেএম রেজাউল করিম তানসেনের কাছে (মশাল) ৮৩৪ ভোটে আশরাফুল আলমের পরাজয় হয়। ১৪ দল মনোনীত প্রার্থী (মশাল) ২০ হাজার ৪০৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন হিরো আলম (একতারা) ১৯ হাজার ৫৭১ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচনে হেরে দমে যাননি হিরো আলম। এই ফলাফল প্রত্যাখান করে আজ বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। হিরো আলম প্রথম দিকে বগুড়ার প্রত্যন্ত এরুলিয়া গ্রামে সিডি বিক্রির কাজ করতেন এবং পরবর্তীতে স্যাটেলাইট ক্যাবল ব্যবসায় নামেন।
ক্যাবল সংযোগের ব্যবসা চলাকালে শখের বশে তিনি সংগীত ভিডিও নির্মাণ শুরু করেন। ইউটিউবে একের পর এক গান আপলোড করে ধীরে ধীরে আলোচনায় আসে হিরো আলম।
২০১৬ সালের দিকে সামাজিক যোগাযোগেরমাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুকে বাংলাদেশের ব্যবহারকারীরা তাকে নিয়ে ট্রল এবং মিম তৈরি শুরু করলে দ্রুতই তিনি পরিচিত হয়ে উঠেন। এ সময় ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমসহ আরো বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি তারকা আশরাফুল আলমের সঙ্গে সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করেন। এভাবেই দ্রুত পরিচিত হয়ে উঠেন তিনি।
এরপর শুরু করেন সিনেমা প্রযোজনা ও অভিনয়। এরপর বিবিসি হিন্দি, জি নিউজ, এনডিটিভি, ডেইলি ভাস্কর, মিড-ডেসহ ভারতের প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমগুলো তাকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ফলে তিনি ভারতীয় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মাঝেও আলোচিত হন হিরো আলম।
ইয়াহু ইন্ডিয়ার এক জরিপ অনুসারে সে সময় ভারতীয় অভিনেতা সালমান খানের চেয়ে আলমকে বেশিবার গুগলে অনুসন্ধান করা হয়েছিল।
এক সময় নিজ এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য পদে নির্বাচন করেছেন হিরো আলম। একাধিক বার পরাজিত হয়েছেন ওই নির্বাচনে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি বগুড়া-০৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেন। ওই নির্বাচনের দিন হিরো আলম দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হন। আহত হয়ে ভোট বর্জন করেছিলেন।
এবার বিএনপি প্রার্থীদের একযোগে সংসদ থেকে পদত্যাগ করায় বগুড়া-০৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) এবং বগুড়া-৬ সদর আসন শূন্য হলে তিনি দুটি আসন থেকেই মনোনয়নপত্র তোলেন। প্রাথমিক বাছাইয়ে তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়।
পরে নির্বাচন কমিশনে আপিল করলে সেখানেও বাতিল হয় তার প্রার্থীতা। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের দারস্থ হলে তিনি নির্বাচন করার যোগ্যতা ফিরে পান। তারপর রাত-দিন এক করে আসন দুটিতে নির্বাচনী প্রচারণা চালান তিনি। তার সঙ্গে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা এসে প্রচারণায় যোগ দেন।
তাকে এক নজর দেখার জন্য উৎসুক জনগণ ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতো। শত শত তরুণ-তরুণী এমন কি প্রশাসনের লোকজনও তার সঙ্গে সেলফি তুলতে ভুল করেননি। মোটাদাগে বগুড়ার দুটি আসনের নির্বাচনী প্রচারণায় হিরো আলম মানুষকে মাতিয়ে তুলেছিলেন।
গতকাল বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটের মাঠে ছিলেন হিরো আলম। বিজয়ের বিষয়েও ছিলেন অনেকটা নিশ্চিত। কিন্তু রাত ৮টায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় ও নির্বাচন অফিস সূত্রে দুই উপজেলার ১১২টি কেন্দ্রের ফলাফলে জাসদের একেএম রেজাউল করিম তানসেনের কাছে (মশাল) ৮৩৪ ভোটে হেরে যান তিনি।
ঘোষিত ফলাফলে অন্য দুই প্রার্থীর মধ্যে জাতীয় পার্টির শাহীন মোস্তফা কামাল ফারুক (লাঙ্গল) ৬ হাজার ৪৪৬ ভোট পেয়েছেন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল হাসান সিদ্দিকী জুয়েল (কুড়াল) পেয়েছেন ১০ হাজার ৪৪২ ভোট।
এদিকে ভোটের ফলাফলের প্রতিক্রিয়ায় হিরো আলম অভিযোগ করেন, নন্দীগ্রাম উপজেলার ভোট কেন্দ্রে তাকে এবং সাংবাদিকদের ঢুকতে দেয়া হয়নি। চাকলমা ভোট কেন্দ্রে যাওয়া মাত্রই তাকে বাঁধা দেয় পুলিশ। গত ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনেও চাকলমা ভোট কেন্দ্রে তার ওপর হামলা হয়েছিল বলেও উল্লেখ করেন।
ডুবাতেঘর কেন্দ্রে জাসদ (মশাল) প্রার্থীর লোকজন তাকে দেখেই উত্তেজিত হয় দাবি করে হিরো আলম বলেন, ভোট কেন্দ্রে যেতেই দায়িত্বরত এসআই আব্দুল মতিন আমার লোকজন এবং সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন।
প্রিজাইডিং অফিসারও উত্তেজিত ছিলেন। নির্বাচনে পেশাগত দায়িত্ব পালন করা সাংবাদিকদের ধাক্কা দিয়েছে সেখানে থাকা পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। কেন্দ্রে আমাকে ঢুকতে দেয়নি, সাংবাদিকরাও ঢুকতে পারেনি। ওই কেন্দ্রে আমার পোলিং এজেন্টকে ঢুকতেই দেয়নি। অধিকাংশ কেন্দ্রেই এমন হয়েছে। ভোট সুষ্ঠু হয়নি।
ফলাফল ঘোষণার মাঝেও কারচুপি আছে। এই ফলাফল মানি না। নির্বাচনের বিস্তারিত অনিয়ম নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করবেন হিরো আলম।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.