যমেক ছাত্রাবাসে সহকর্মী ইন্টার্ন চিকিৎসককে মারধর
অভিযুক্তরা ছাত্রাবাসে সারারাত মাদকের আড্ডা বসিয়ে করেন চেঁচামেচি
যশোর মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসে এক ইন্টার্ন চিকিৎসককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। সহকর্মীদের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার এ ঘটনায় আহত ইন্টার্নের বড়ভাই জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে গত মঙ্গলবার রাতে যশোর মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাসের ১০৪ নম্বর কক্ষে। গুরুতর আহত ইন্টার্ন চিকিৎসক জাকির হোসেন যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তিনি রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হরিশ্বর গ্রামের মৃত সুরুজ জামানের ছেলে।
জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও জেলা ডিবির ওসি রুপন কুমার সরকার বলেন, ‘এই ঘটনায় একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে, গতকাল বুধবার যশোর মেডিকেল কলেজ প্রশাসন সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নুর কুতুউল আলমকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আগামী রোববারের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
যশোর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মহিদুর রহমান বলেন, ‘ঘটনাটি দুঃখজনক। আমি জাকিরকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। জাকিরের হাত-পা ভেঙে গেছে। বুকের হাড়েও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দ্রুতই অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মহিদুর রহমান বলেন, ‘অনেকেই পড়াশোনা শেষ হলেও ছাত্রাবাসে রয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় থাকায় তাদের নামিয়ে দিতে পারি না। এই বিষয়ে অনেকটাই চাপে থাকে কলেজ প্রশাসন।’
হাসপাতালে ভর্তি ইন্টার্ন চিকিৎসক জাকির হোসেন বলেন, মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসক মেহেদী হাসান লিয়ন, শামীম হাসান, আকাশ, আব্দুর রহমান তানিমসহ তিন-চারজন ছাত্রাবাসের ১০৪ নম্বর কক্ষে প্রতিনিয়ত মাদকের আড্ডা বসান। সারা রাত চিৎকার-চেঁচামেচি করেন। ওই রুমের পাশেই আমার রুম। এ কারণে পড়াশোনায় ব্যাঘাত হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবাদ করলে মঙ্গলবার রাতে তাঁরা রুমে ঢুকে হকিস্টিক ও জিআই পাইপ দিয়ে আমাকে মারধর করেন। রাত ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত মেরে আমার হাত-পা ভেঙে দেন। একপর্যায়ে ঘর থেকে নগদ টাকা, মানিব্যাগ ও মোটরসাইকেল নিয়ে যায় তারা।’
তবে, মেডিকেল কলেজের অন্য একটি সূত্র জানায়, হামলাকারীদের অধিকাংশই ইন্টার্ন। তাঁদের লেখাপড়া শেষ হয়েছে দুই বছর আগে। তার পরেও ছাত্রলীগের রাজনীতির ছত্রচ্ছায়ায় তারা ছাত্রাবাসে সিট নিয়ে থাকছেন। বিষয়টি জানে কলেজ প্রশাসন।
আহতের বড়ভাই জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ভাইকে ডাক্তারি পড়াশোনা করার জন্য যশোর মেডিকেলে ভর্তি করে ছিলাম। এখন সন্ত্রাসী হামলার স্বীকার হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর দুই পা ও এক হাত হকিস্টিক দিয়ে ভেঙে দিয়েছে।’
জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, ‘তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এলোপাতাড়ি মারধরের ছাপ রয়েছে। এই ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কলেজ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে সঠিক বিচার কামনা করছি।’
এই বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য ও সহকারী হোস্টেল সুপার বলেন, ‘ঘটনাটি দুঃখজনক, ইতিমধ্যে আহত ইন্টার্ন চিকিৎসককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তদন্ত চলমান। দ্রুতই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।’
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.