নওগাঁর বদলগাছীতে ছোট যমুনা নদীর উজানে নদীর বুকে বাঁধ দিয়ে ¯্রােতের পানি আটকে রেখে নদীর বুক শুকিয়ে ফেলে অবৈধ্য খনন যন্ত্র দিয়ে বিভিন্ন স্থানের লালমাটি কর্তনের চলছে মহৎসব। বদলগাছী উপজেলার চকআলম নামক গ্রামের পাশে ছোট যুমনা নদীর এখন এই অবস্থা। নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি আটকে রাখায় উজানে নদীর ধারের বোরো ধানসহ মিষ্টি আলুর ক্ষেতে পানি উঠে ফসল নষ্ট হওয়ার অভিযোগও উঠেছে। বালু মহাল লীজ নেওয়ার নামে নীতিমালাকে কোন তোয়াক্কা না করে নদী থেকে মাটি লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতাধর নদীর বালু মহাল ইজারাদারের বিরুদ্ধে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা সদরের উত্তরে চকআলম নামক গ্রামের নিকট ছোট যমুনা নদীর বুকে আড়াআড়ি বাঁধ দেওয়া। একাংশে রয়েছে পানি, অন্য অংশ শুকিয়ে গেছে। আর ঐ শুকিয়ে যাওয়া অংশ থেকে কাটা হচ্ছে লালমাটি উজানে ¯্রােতের পানি আটকে রাখা হয়েছে।বাঁধ কে দিয়েছে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, বালুমহাল ইজারাদারেরা নদীতে বাঁধ দিয়েছে। স্থানীয় কয়েকজন কৃষক বলেন, আমরা অনেক কৃষক নদীর ধারে মিষ্টি আলু চাষাবাদ করি। অনেক গরীব মানুষ নদীর ধারে বোরো ধান চাষ করেছে। উজানে বহুদুর পর্যন্ত পানি উঠে এসব ফসল নষ্ট হচ্ছে।
মথুরাপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য কদমগাছী গ্রামের বাসিন্দা রেজাউল করিম বাবু বলেন, নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি আটকে রেখে বদলগাছী থেকে দক্ষিণে পুরো যমুনা নদীর বুক শুকিয়ে ফেলা হয়েছে। বালু মহাল লীজের নামে এসব কর্মকান্ড করছেন ইজারাদার। নদীর মাটিবাহী ট্রাক বেপরোয়া চলাচলে রাস্তাঘাট নষ্ট করছে। ধুলোবালুতে রাস্তাঘাটে মানুষ বের হতে পারছে না। বৃষ্টি হলে পাকা রাস্তায় কাদা হচ্ছে। ছোট যমুনা নদীর বয়সে বালু মহাল লিজের নামে এ রকম তান্ডব লিলা এলাকাবাসীর চোঁখে এর আগে কখনো পরেনি ।
কাদিমপুর গ্রামের আবু তাহের জানায়, নদীর ধারে চাষকৃত তার ৮ শতক বোরো ধান ডুবে গেছে, রইচ উদ্দিনের১৬ শতক। বদলগাছী থেকে ১৫ কিলো দুরে বালুভরা ও এনায়েতপুর গ্রামের লোক জন জানায় তারা নারী পুরুষ সবাই নদীর পানিতে গোসল করে কিন্তু উজানে নদীতে বাঁধ দেওয়ার কারনে নদীতে পানি আসছে না। নদীর বুক শুকিয়ে উঠেছে। নদীর বুকে নিচু জায়গায় কিছু ঘোলা পানি জমে আছে। সেই ঘোলা পানিতে তারা গোসল করছে। প্রায় শতাধিক এলাকাবাসী জানান, নদীর বুক শুকিয়ে উঠায় মৎস্য সম্পদ ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। নদীতে বালু নেই তবু হয় লিজ। এর ফলে ইজাদারেরা নদীর দুপাশে প্রতিবছর বিঘা বিঘা ফসলি জমির মাটি জোর পূর্বক কেটে নিয়ে চলে যাচ্ছে। এ যেন মগের মূল্যক।
এ বিষয়ে বালু মহাল ইজারাদার তপন কুমারের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ফোন রিসিভ হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)আলপনা ইয়াসমিন এর সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, এ কেমন কথা নদীর গতিপথ বন্ধ করে মাটি কাটছে। বিষয়টি দেখতেছি। নওগাঁ জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফায়জুর রহমান এর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে ইউএনওর সঙ্গে কথা বলতে হবে।এ বিষয়ে নওগাঁর জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান, বিপিএএ এর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি জানান, লিজ দেওয়ার সাথে সাথে বালু কর্তনের নীতিমালা দেওয়া হয়েছে এর বাহিরে কোন কিছু করা অপরাধ। এ ছাড়া নদীতে বাঁধ দিয়ে যদি কেউ পনির গতিপথ বন্ধ করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এলাকার সচেতন মহল আক্ষেপ করে বলেন, কিছুদিন আগে আমরা পত্র পত্রিকায় দেখেছি বগুড়ার সদও উপজেলার নওদাপাড়া এলাকায় করতোয় নদীতে মাটি ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ করায় ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ (টিএমএসএস) নামের এক এনজিওকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন সেখানকার ভ্রম্যমাণ আদালত। আর আমাদের বদলগাছীতে একের পর এক বালুমহাল ইজারাদার অপরাধ করে চলেও এখানকার প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না কেন । এক দেশে কি দুই আইন।
এপ্রিল ০৪, ২০২৩ at ১২:৪৯:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/মেইস/সুরা
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.