ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরে হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে পুলিশ প্রধান এ কথা বলেন।
একইদিন সকালে বঙ্গবাজারের আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন সংস্থা চেষ্টা করলেও আগুন নিয়ন্ত্রণে গাফলতির অভিযোগ এনে ফায়ার সার্ভিসের প্রধান কার্যালয়ে হামলা চালায় কিছু বিক্ষুব্ধ ব্যবসায়ী। এ সময় ফায়ার কর্মীদের মারধর এবং গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
আইজিপি বলেন, আমরা ভোরে আগুনের খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে ছুটে আসি। পৌনে সাতটার মধ্যে সব সিনিয়র অফিসার ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেন। আমরা এসে ভয়াবহ আগুন দেখি। তখন থেকেই ফায়ার সার্ভিস কাজ করছে। আমরা রাজারবাগ থেকে পাঁচটি ওয়াটার ক্যানন এনে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে কাজ শুরু করি। আমাদের ওয়াটার রিজার্ভার থেকে প্রায় দুই লাখ লিটার পানি সাপ্লাই দিয়েছি। আমাদের পুলিশের প্রায় দুই হাজার ফোর্স এই এলাকায় দায়িত্ব পালন করছে।
পুলিশের আইজি বলেন ‘ঘটনাটি যখন ঘটেছে, আগে থেকে প্রস্তুতি ছিল না। আস্তে আস্তে আমরা শক্তি বৃদ্ধি করেছি, পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছি। এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাও ঠিক রেখেছি, যার কারণে এত বড় ঘটনার পরও ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা সচল ছিল।
ফায়ার সার্ভিসের তিন সদস্যসহ আহত আটজন হাসপাতালে:
বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের তিন সদস্যসহ আটজন আহত হয়েছেন। তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) বার্ন ইনস্টিটিউটে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
আহতরা হলেন- ফায়ার সার্ভিস কর্মী রবিউল ইসলাম অন্তর, আতিকুর রহমান রাজন এবং মেহেদি হাসান। বাকিরা হলেন; নিলয়, শাহিন, রিপন, রুবেল এবং দুলাল মিয়া। তাদের মধ্যে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি আছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মী মেহেদি হাসান।
বঙ্গবাজারে ব্যবসায়ীদের স্বপ্ন পুড়ে ছাই:
ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডে ঈদের আগে ব্যবসায়ীদের সব স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে জানিয়ে তাদের আর্তনাদ করতে দেখা গেছে।
মঙ্গলবার সকাল থেকে গুলিস্তান আলাকার আকাশ ধোঁয়ায় কালো হয়ে যায়। এসময় পোশাক ব্যবসায়ীদের হতাশ হয়ে রাস্তায় বসে থাকতে দেখা গেছে।
ফায়ার সার্ভিস অফিসে হামলা, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ:
ভয়াবহ আগুন লাগার মধ্যেই পুরান ঢাকার কাজী আলাউদ্দিন রোডে অবস্থিত ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের প্রধান কার্যালয়ে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেছেন বিক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবার সকাল ৯টা ২০ মিনিটের দিকে এ ঘটনা ঘটে। এতে ভবনের জানালার গ্লাসগুলো ভেঙে পড়তে দেখা গেছে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বঙ্গবাজারের উল্টোপাশে হাঁটা দূরত্বে ফায়ার সার্ভিসের অফিস হলেও আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজে শুরুতে গড়িমসি করেছে তারা। সঠিকভাবে কাজ শুরু করলে এত ভয়াবহ অবস্থা হতো না বলে দাবি তাদের।
পুলিশ জানায়, বেশ কয়েকজন বিক্ষুব্ধ ফায়ার সার্ভিস ভবনে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় ভবনের কয়েকটি গ্লাস ভেঙ্গে যায়।
১৯৯৫ সালেও আগুনে পুড়েছিল বঙ্গবাজার:
চারটি ইউনিটে বিভক্ত বঙ্গবাজার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন। এই চার ইউনিট হলো বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স, গুলিস্তান ইউনিট, মহানগর ইউনিট ও আদর্শ ইউনিট। সব মিলিয়ে মোট দোকানের সংখ্যা ২ হাজার ৩৭০টি।
১৯৯৫ সালে একবার ভয়াবহ আগুনে পুড়েছিল বঙ্গবাজার। পরে নতুন করে গড়ে তোলা হয় ওই মার্কেট। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২৪ জুলাই আগুনে গুলিস্তান ইউনিটের কয়েকটি দোকান পুড়ে যায়।
এপ্রিল ০৪, ২০২৩ at ১৯:১৪:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/ঢাপো/সুরা
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.